যাই হোক, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী হয়ে যাচ্ছে। Digital Camera নামে একটা বিদেশী ম্যাগাজিনের লোকাল এডিশন পাওয়া যায়। সস্তা বলে এখন ওটাই কিনি। তো সেটায় দেখি মার্চে DCIM বলে একটা ইভেন্ট হবে।
এদের ওয়েবসাইটে গিয়ে জানলাম তুঘলকি কান্ড হতে চলেছে। ক্যামেরা, গ্যাজেটস, সেমিনার, ফ্যাশনশো এসব করে তারা মাত করে দেবে সবাইকে। ওয়েবসাইটে অনুসারে,
The Digital Camera, Imaging and Media Show 2009 (DCIM Show 2009) aims to bring together the various components that make up the photography and imaging industry in Malaysia i.e. manufacturers, vendors, retailers, labs and more importantly, the hobbyists and professionals.
Organised by Velocity Media Sdn Bhd (Velocity Media), publisher of Malaysia’s premier digital photography magazine – Digital Camera Magazine – the event will showcase the latest innovations and products in the world of photography. Velocity Media also publishes the top lifestyle-gadget magazine T3 Malaysia, the foremost gaming magazine PC Gamer Malaysia and the authoritative IT magazine Max IT.
....The main objective of DCIM Show is to be recognised as the foremost photography and imaging event in the region, placing Malaysia in the world map of photography.
তো এরকম একটা ইভেন্টে না গিয়ে থাকা যায় না। শুক্রবার (২৭মার্চ) আধাবেলা অফিস করেই চলে গেলাম মিডভ্যালী মেগামলের একজিবিশন সেন্টারে। গিয়েই প্রথম ধাক্কা। ক্যানন, নিকন, ইপসন ছাড়া আর ৫/৬টা বুথ। কোন অফার নেই, নেই ভালো জিনিসপত্র! এমন সময় দেখি ভীড় জমছে স্টেজের কাছে, মডেলরা আসবে। এবারেও ৭০-৩০০ নিয়ে এসেছি, সাথে স্পিডলাইট আর নতুন কেনা ১৫মিমি ফিশআই। ভীড়ের চোটে এবারেও সুবিধা করতে পারলাম না। এমন অবস্থায় দেখি লোকজন ছোট ছোট মই সাথে এনেছে, যেটায় চড়ে ভীড় এড়িয়ে ছবি তোলা যাবে। মনে মনে বলি, তোমাদের লাল সালাম। আমি পেশাদার হলেও মইটানার কাম করতে রাজী না। যাইহোক, ভীড়ে হালকা গুঁতা দিতেই দেখি সামনে এগিয়ে গেলাম, কিন্তু ডানে-বামে এতো লোকে ছবি তুলছে যে পরিস্কার ভিউ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন সময় বুদ্ধি এল একটা। কর্ডন বেল্টের নীচে সবার পায়ে কাছে বসে পড়লাম, তারপর একদম সীমানার ভেতরে। যেহেতু বসে আছি, তাই আয়োজকরা আর ভ্যাজাল করল না, আমারও সামনে পরিস্কার ভিউ। শুরু হল ছবি তোলা। শখ করে স্পিডলাইট লাগিয়ে ছিলাম, কিছুক্ষন পর খুলে ফেলতে হল, এতো ওজন নিতে পারছে না হাত। ISO হাকিয়ে দিয়ে তুলে গেলাম। মডেলগুলো এমেচার মডেল, বেসিকালি এরা এসেছে একটা কনটেস্টে। ইভেন্টের শেষ একজন জয়ী হয়ে মালপানি কামানোর সুযোগ পাবে। মডেল এমেচার হওয়াতে পোজ ঠিকমতো আসছিল না কারোই। কিম্বারলি আর জেয়ির চেহারাসুরৎ ভালো ছিল, কিন্তু মেয়েগুলো নড়াচড়াই শিখে নাই। কি আর করা!!!
শুটিং শেষে হিসাব করে দেকি ছবি উঠিয়েছি আটশোর উপরে, ফোর্টি ডি বলে কথা (বাড়ি ফিরে দেখি ৯০% এরই ফোকাস ভুল!!!)। ঢু মারা শুরু করি বুথ থেকে বুথে। ৮জিবি কিঙস্টোন সিএফ কার্ড বহুদিন আগে কিনেছি ৬৯ এ, এখানে দেখি ৮০র মতো! ক্যাননে গিয়ে দেখি তারা আরেকপ্রস্থ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৩৫মিম ১.৪ এল ছয় হাজারের উপরে চলে গেছে!!! হঠাৎ দেখি এক কোনায় একটা ফাইভডি মার্ক টু শিকল দিয়ে বাঁধা। চান্স পেয়ে হাতালাম কিছুক্ষন, ছবিও তুললাম কন্টিনিউয়াস মোডে। ISO 6400তে বেশ ভালো ছবি আসে, পয়সা হলে কেনা যেতে পারে। তবে এই পয়সা আদৌ হবে কিনা সেইটাই ভাববার বিষয়। পাশে সিড়ি দেখে উপরে উঠে গেলাম। সেখানে একটা ৪০০মিমি ২.৮ আইএস লেন্স বসানো আছে। যে কেউ নিজের বডি লাগিয়ে ছবি নিতে পারে। ৪০০মিমি ২.৮ একটা দানব। ইদানিং আমার টেলিপ্রীতি কমে গেছে। তাই নীচে ফিরে গেলাম। নীচে ফিরে গিয়ে ক্লান্ত লাগা শুরু হল, ফোটোশুট ছাড়া এই শো এর আর কোন আকর্ষন নেই। সেমিনার আছে পরের দিন। ঠিক করলাম আবার আসবো, সকালে একটা মডেলশুট আছে। শুটিং সেরে সেমিনারে বসে দেখব কি বলে ছাগলগুলো।
বাড়ি এসে ফ্লিকারে ছবি আপলোড করতে বসলাম। দুয়েকটা ছবি কিঞ্চিত দুঃসাহসী ছিল, কিন্তু অশ্লীল বলা যাবে না মনে হয়। "শুধুই বাংলা" নামের গ্রুপের মডারেটর জানালেন যে গ্রুপে যেহেতু শিশুরাও আসে তাই এদুটো ছবি সরিয়ে দিতে হচ্ছে। আমি মনে মনে হেসে বললাম, "আচ্ছা"। এই প্রথম ফ্লিকারে আমার হিট কাউন্ট হুহু করে বাড়তে লাগলো। খুব আনন্দিত হবার কিছু নাই, স্বল্পবসনা মেয়ে দেখে লোকে লাফিয়ে পড়েবে সেটাই স্বাভাবিক..
নীচের দুটিই সেই বিখ্যাত ঝামেলাদায়ক ছবি!
শনিবার ঠিক একই কায়দায় জায়গা মতো বসে গেলাম। এবারে আগেরবারে ভুলগুলি কম হল, কিন্তু পজিশন আলাদা বলে আগের ব্যাকড্রপ পেলাম না। ফলে ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রচুর হাবিজাবি জিনিস চলে এল। দেড় ঘন্টা শুট করে অবস্থা "চ্রমখ্রাপ" হয়ে গেল। পাশের স্টলে অর্গানিক প্যাশন ফ্রুট জুস আর টারমারিক নাসি লেমাক বিক্রি করছিল। দশ রিংগিত দিয়ে সেটা খেয়েই রিফুয়েলড হলাম। খেতে গিয়ে ক্যাননের সেমিনারটা মিস হল। অবশ্য জুঙ যেই সেমিনারের বক্তা সেটা মিস করার না করার মধ্যে ফারাক কম। ঘন্টা খানেক পরে ওয়াকমের রিটাচিঙ এর সেমিনারে গেলাম। বক্তা ওস্তাদলোক, ভালো জ্ঞান হল। এই সেমিনার শেষে আবার ঢুকলাম জিমি খু এর ট্রাভেল ফোটোগ্রাফির সেমিনারে। ভদ্রলোক আর্ট ডিরেকশন ছেড়ে ফোটোগ্রাফিতে ঢুকেছিলেন, বহু স্ট্রাগল করে ফাইনালি একটা ক্যারিয়ার করেছেন। এর ছবি এখন বড় বড় ট্র্যাভেল ম্যাগাজিনের সম্পদ। জিমির সাথে গল্প হল নানা বিষয় নিয়ে। বিশেষত অচেনা জায়গায় জনমানুষের ছবি তোলার জটিলতা নিয়ে।
জিমি, তার ভারতে তোলা ছবির সামনে
সেমিনার শেষে দেখি সারা গা ব্যথা। ক্যামেরার স্ট্র্যাপ কেটে বসে যাচ্ছে গলায়। তখন চোখে পড়ল ফ্লেক্সিরাবারের স্ট্র্যাপ (Matin ব্র্যান্ড) । ৩৫ রিংগিত দিয়ে কিনে সাথে সাথে লাগালাম ক্যামেরায়। জিনিসটা কাজের। রাবারি ম্যাটেরিয়ালের বলে দৌড়ঝাপ করলেও কেটে বসে না। অনেকদিন পর ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে আরাম হল।
বাড়ি ফিরে দেখি এবার ছবি তুলেছি নয়শোরও বেশী! এবারে ফোকাস জনিত সমস্যা হয়নি। শার্পনেস বেশ ভালো, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্যই মার খেয়ে গেল বহুছবি। যাই হোক, ফ্লিকারে আপলোড করে ভালোই লাগছে, শুটিং মন্দ হয়নি, অন্তত আমার গরীবানা যন্ত্রপাতির কথা মাথায় রাখলে তাই মনে হওয়া উচিত ;)
পড়ে ভালো লাগলো। বাংলায় এরকম তথ্যবহুল ব্লগ দেখে আমি'ও আনুপ্রাণিত হলাম।
ReplyDelete- দেবাঞ্জন
হঠাত করে বাংলায়ে গুগুল করে তোমার ব্লগ-এ এলাম, অশ্লিল ছবি দেখার তারনায়ে। ভুল ভেঙ্গে ভাল লাগল। বাংলায়ে এমন লেখা পরতে পারব বলে ভাবিনি আগে। আমার ফটো তোলার অল্প আধতু শখ আছে, তাই আরও enjoy করলাম।
ReplyDeleteএখানে লেখআর আরও উদ্দেশ্য হল, আমার ৩৫০ডি ক্যানন -এ আমি একটা fashion show কভার করেছিলাম, ধার করে ক্যামেরা নিয়েচিলাম স্যারের কাছ থেকে,কিন্তু সেতাই আমার অনেক ছবির মধ্যে ভাললাগার ছবি এবং পরে ওওই ছবিটা আয়জকেরা ব্যাবহার করেচে অনীকবার। ট্রাই করলাম বাংলায়ে লিখে তমায়ে উদ্ভুদ্ধ করতে ঃ)
Neelz,
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ। ছবি তুলতে থাকো, নিজের হোক বা পরের ক্যামেরায়।
ছবি যাচ্ছেতাই হোক আর ভালোই হোক, পুরোটাই লাভ.. সময়কে আটকে রাখার এর চেয়ে বড় কৌশল কী হতে পারে? :)