
তিনমাস ছিলাম। অফিস বাদে বাকিটা সময় হয় নেটে নাহয় হেটে হেটে কাটতো আমার। আমার বাঁধা পারডিয়েম, আমেরিকা যাব ভাইটাকে দেখতে, তাতে খরচ আছে, আছে ভবিষ্যতের ভাবনা - এসব ভেবে ভেবে পয়সা খরচ করিনা, কেউ বলে নায়াগ্রা দেখতে, কেউ ডাকে "টরোন্টো চলে আয়" বলে। আমি কিছু বলি না, মুচকি হাসি। এই কার্পণ্যের দুর্দিনে আবিষ্কার করলাম সেন্ট ক্যাথরিনের ঐশ্বর্য, রাস্তা তো নয়, না-ঘুমানো জীবন্ত এক মিউজিয়াম। এ মাথা থেকে ও মাথা হাটি, আর দেখি, কখনো ফ্রাঙ্কোফনি কনসার্টে উদোম হয়ে গাইতে থাকা শিল্পীদের, কখনও এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সভেস্টাইট) ফেস্টিভ্যাল, কখনওবা কয়েন চাইতে আসা সেই মেয়েটা। মানুষ পরম আগ্রহে দেশ দেখে, আমি দেখি প্রতিদিনের চেনা সেই রাস্তাটা
এরকম করতে করতে একদিন দেখা হল পাবলোর সাথে। এই রাস্তায় নানা জাতের পাগল বসে, তাই দাবার বোর্ড সাজিয়ে বসে থাকা এই ক্যারিবিয়কে দেখে যে প্রথমটা যে খুব অবাক হয়েছিলাম তা নয়। চোখে চোখ পড়তেই হাত দিয়ে একটা ইশারা করলো সে যার অর্থ "খেলে যান একদান"। দাবা খেলা জিনিসটা আমার রক্তে নেই। যে রাস্তায় এক ডজন স্ট্রিপ ক্লাব সেখানে আর যাই হোক দাবা খেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ না। পাত্তা দিলাম না। ছেলেটার অবশ্য আমার পাত্তাপাত্তি নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই, পুরোনো ব্যাটারী দিয়ে একটা কাগজ রাস্তায় বিছাতেই ব্যস্ত সে।
কমলা হলুদ কাগজে মার্কার দিয়ে লেখা একটা পোস্টার

কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করি নাম কি তোমার?
"পাবলো".. সংক্ষিপ্ত উত্তর তার।
বাবা মরছে ক্যান্সারে। বহুদিন দেখা হয়না। মরবার আগে কি একটুও দেখা হবে না। পাবলোর কাছে চারশো আশি ডলার নেই যে জ্যামাইকা ফিরে যাবে। হাল ছাড়েনি। তিন মিনিটের স্পীড চেস খেলার আনন্দ বিক্রী করতে বসেছে সে। বিনিময়ে দুটো পয়সা।
ততোক্ষনে ভীড় জমেছে । একজন দুজন করে খেলতে বসছে পাবলো সাথে। কয়েন আর ডলারের নোটও জমছে ধীরে ধীরে। তিন মিনিটের আগেই কুপোকাত হয়ে উঠে যাচ্ছে সবাই, যদিও মুখে হাসি।
হাসি ছিলো না পাবলোর মুখে, দাবার খেলায় জিতলেও জীবনের খেলায় সে জিতবে কিভাবে? এই উত্তরটা পাবলো কিংবা আমি কেউই সেদিন জানতাম না।
(পুরোনো লেখা, ব্লগস্পটে রিপোস্ট করলাম)
Sou do Brasil e gosto muito de xadrez.
ReplyDelete