"কেন? হয়াই ইন মার্চ?" আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে শুধাই
"আনওয়ার", রাও এর সংক্ষিপ্ত উত্তর আর খানিকটা "বুঝে নাও" টাইপ হাসি
আনোয়ার নামটা বললে মালেশিয়ায় আরেক যৌনকেলেংকারীর নায়কের (আসলেই কি??) কথাই প্রথমে ভাবে সবাই। পুরো নাম আনোয়ার ইব্রাহীম, একদা ডক্টর এম এর ডানহাত ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী বলে যার ব্যাপক পরিচিতি ছিল। কিন্তু এশিয়ান ক্রাইসিসের সময় কিছু পদক্ষেপের জন্য আনোয়ারের সাথে মাহাথির এবং অন্যান্য পাতিনেতাদের বিরোধ শুরু হয়। সেই বিরোধ এক পর্যায়ে এমন রূপ নেয় যে সংসদে "আনোয়ার কেন প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না তার পক্ষে ৫০টি কারন" নামে একটি বই বিলি-বিতরন করা হয় (অবশ্য ২০০৫-এ বইটির লেখক, মৃত্যূর আগে কোর্টের আদেশে কয়েক লাখ রিঙ্গিত ক্ষতিপূরন দিয়েছিলেন আনোয়ারকে)।
ডক্টর এম খুব ভালো জানতেন আনোয়ারের জনপ্রিয়তা খারাপ না। ইলেকশনে দাঁড়ালে জিতে যাবার সম্ভাবনাটাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ডক্টর এম কিছুই করলেন না
কিন্তু খেলা শুরু হয়ে গেছে তলে তলে। ১৯৯৮ সালে ২রা সেপ্টেম্বর ভদ্রলোকের সংসদ সদস্যপদ বাতিল করা হয়। আর পরদিন বহিস্কার করা হয় সরকারী দল UMNO থেকে। কদিন পরই আনোয়ারে স্পীচরাইটার ও আরো একজনকে আটক করা হয় আনোয়ারের সাথে অবৈধ যৌনকর্মের দায়ে!
২০শে সেপ্টেম্বর কুয়ালালুমপুরে প্রায় লাখ খানেক লোকের সমাবেশের নেতৃত্ব দেন আনোয়ার। মালেশিয়ায় মতো দেশে ঘটনাটা আসলেই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ। সমাবেশে তিনি দাবী তুললেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের, প্রতিবাদ করলেন মাহাথিরের স্বজনপ্রীতির, দাবী জানালেন পদত্যাগের । কেউ তাকে দেখলেন নতুন নেতা হিসাবে, কেউ তকমা দিলেন হালুয়ারুটির ভাগে নাখোশ সুবিধাবাদী হিসেবে।
সেই রাতে সশস্ত্র মুখোশধারী SWAT টিমের লোকজন আনোয়ার ইব্রাহীমের বাড়ি ঘিরে ফেলে, গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
কিছুদিন বাদে আনোয়ারের একটি ছবি প্রকাশ পায়, কালসিটে পড়া চোখে থাম্বস আপ দেখাচ্ছেন তিনি। বলা হয়, তৎকালীন আইজিপি রাহীম নূর ঘুষিয়ে পেঁদিয়ে তারচোখে কালসিটে ফেলে দিয়েছিলেন!
আনোয়ারেরর বিরুদ্ধে মামলা হয় দুটি, একটি Sodomy জনিত, আরেকটি দুর্নীতিঘটিত। ১৯৯৯ এর এপ্রিলে দুর্নীতির মামলায় ৬বছর ও Sodomy-র মামলায় ৯বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়। যদিও কয়েকবছর পর ফেডারেল কোর্টে Sodomy-র মামলার রায় বাতিল করা হয়। কিন্তু দুর্নীতির রায় বহাল থাকে।
মালেশিয়ার দন্ড প্রাপ্তরা পাঁচবছর রাজনীতিতে আসতে পারেন না। দুর্জনেরা বলে আনোয়ারের মতো একজন শক্ত প্রতিপক্ষকে আটকাতে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন ডাক্তার সাহেব। হিসেব মতে ২০০৮ এর ১৪ই এপ্রিলের আগে আনোয়ার ইব্রাহীম মালেশিয়ার রাজনীতিতে পা দিতে পারবেন না। দুইয়ে দুইয়ে চার করি। এবার আমার কাছে সব স্পষ্ট হয়ে যায়, কেন রাও বলেছিল সরকার মার্চেই ইলেকশন করবে।
সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে আমি কিউবিকলের দিকে পা বাড়াতে উঠি। সবকিছু কেমন চেনা চেনা লাগতে থাকে।
(কিস্তিখতম!)
সূত্রঃ
উইকিপিডিয়া
বিবিসি
ফাও ভিডিও: ডেমোক্রেসী মালেশিয়ান স্টাইল! ২০০৭ এর ১০ই ডিসেম্বর কেমিকেল ছিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হচ্ছে জনসমাবেশ
No comments:
Post a Comment
To comment in Bangla, please use Avro Keyboard Interface. Click here for Bangla Installation Guide.
বাংলায় লিখতে অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করুন. বাংলা ইন্সটলেশন গাইড পাবেন এখানে।