ভিসা চেয়েছিলাম সাতদিনের, শেষ পর্যন্ত পেলাম একমাসের, এবং মাল্টিপল এন্ট্রি! ট্র্যাভেল এজেন্টের রানার হা করে তাকিয়ে থাকে, জানতে চায় কোথাও ভুল হয়নি তো। না, ভুল হবার কথা না। ভিক্টর হারমেলের কল্যাণে জেফারসন সাহেব আর ঝামেলা করেননি, সাও পাওলো হিয়ার আই কাম!
সাও পাওলো যাবার দুটো পথ, একটা জোহান্সবার্গ হয়ে, আরেকটা দুবাই হয়ে। এমিরাতস্ এর প্রেমে মশগুল ছিলাম এককালে। ঊনচল্লিশ হাজার রি্ঙ্গিত খরচ করে তাই তাদের টিকিটই কাটা হল শেষমেষ..
প্লেনে উঠে হতাশ হতে হল, বাজে প্লেন, সীট ১৮০ ডিগ্রী বাঁকে না পুরো, খাবার যাতা। সাত ঘন্টা কিভাবে পার করবো ভাবতে ভাবতে মুভি লিস্টে চোখ আটকে গেল, ব্রিক লেন! বইটার নাম শুনেছি অনেক, পড়া আর হয়নি। সিনেমা দেখার সুযোগটা পেয়ে বুড়ো বিমানটাকে ক্ষমা করে দিলাম। সিনেমাটা যে খুব আহামরি তা ঠিক না, কিন্তু কাহিনীটা স্পর্শ করে, গল্পের চরিত্রগুলোর মধ্যে কেমন করে জানি আমি-তুমি-আমরা ঢুকে যায়। দুঃখ পাওয়ায় আনন্দ আছে, তাকে বহন করাতে নেই। হাত বাড়াই ওয়াইনের গেলাশে.. হতভাগ্য মানুষ শেষে আশ্রয় খোঁজে বিস্বাদ তরলে..
দুবাইতে নেমে দেখলাম চেনা বিমানবন্দরটা বদলে গেছে আমূল। ব্যাগ টানতে টানতে গানচোঙওয়াই আর আমি ঢুকি বিজনেস ক্লাস লাউন্জে। বিজনেম ক্লাস লাউন্জ এর কথা চিন্তা করলে মনে যতোটুকু শান্তিবোধ হয়, আমরা ঠিক ততোখানিই অশান্তির মধ্যে পড়ে গেলাম। বিশাল ছাউনি, কিন্তু হাতে গোনা শৌচাগার। হিসি করতে গেলেও দীর্ঘলাইন, মহাযন্ত্রনা! আর এই যন্ত্রনা সইতে হবে আরো পাঁচ ঘন্টা! সময় কাটাতে ক্যামেরার দোকানে ঢুঁ মারতে যাই। শখ ছিল একটা লেন্স কিনবো, লোকবলে দুবাই-এ সব সস্তা। লোকের কথা সত্য নয়। কি আর করা! লাউন্জের এককোনায় ৬টা এক্সবক্স৩৬০ বসিয়ে একটা গেমিং জোনের মতো তৈরি করেছে। এটা আগে ছিলনা। সময় কাটাতে ক্রিস (গানচোঙওয়াই) আর আমি দুজনে বসে পড়ি গেমপ্যাড নিয়ে..
সাও পাওলোর বিমান যখন এলো তখন অবসাদে শরীর ভেঙ্গে পড়ে প্রায়। বিমান পঁয়ত্রিশ হাজার ফুটে না উঠলে সীট বাঁকানোর নিয়ম নেই। কষ্ট করে বসে থাকি। ঘোড়ামুখী বিমানবালাদের দেখে কতো আর যন্ত্রনা ভোলা যায়! পনের ঘন্টার জার্নি, একটু ঘুমাই, তারপর উঠি, টয়লেটে যাই, দাড়ি কাটি, দাঁত মাজি.. কিন্তু সময় আর যায় না। শেষ বিমানের ভিডিও দেখা শুরু করি। আমার ধারনা ছিল বিমান সৈকত ছুঁয়ে যায়, অন্তত ক্যানাডায় সেভাবেই যেতে দেখেছি। এবার দেখলাম সোজা আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছে। পৌছাতে তখনও ঘন্টা দুয়েক বাকি..
আমার বিশেষ ভয় ছিল কাস্টমস নিয়ে। ল্যাপটপ কিনেছি মুড়িওয়ালার জন্য।সাথে অফিসের একটা। ওয়েবসাইটে বলেছে এরা বিদেশী জিনিসে দুমদাম ট্যাক্স ধরে ফেলে। আমি ভালো মিথ্যা বলতে পারি না, কাস্টমস আটকালে কেলেঙকারী হয়ে যাবে। দুরুদুরু বুকে ইমিগ্রেশনের কিউতে দাড়াই। একটা লক্ষীচেহারা যুবক সীল মারছে। আমাকে দেখে বলে, স্পীক পর্তুগীজ?, মাথা ঝাকাই। যুবক মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে দুম করে সীল মেরে দেয় সবুজ পাসপোর্ট। এই প্রথম কেউ ভুরু কুঁচকে তাকায় না আমার দিকে..
অদ্ভুত আনন্দে আমি পা রাখি লাতিন আমেরিকার এই বিশাল দেশটাতে...
(চলবে)
No comments:
Post a Comment
To comment in Bangla, please use Avro Keyboard Interface. Click here for Bangla Installation Guide.
বাংলায় লিখতে অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করুন. বাংলা ইন্সটলেশন গাইড পাবেন এখানে।