সংসদ নির্বাচনের দিনে ছবি তুলতে বের হয়ে এই জিনিস চোখে পড়ল . . . . . . .
Tuesday, December 30, 2008
Tuesday, December 16, 2008
(লেখাটা বহুদিন হল ঝুলে আছে, ব্রঙ্কিয়াল ইনফেকশনে পড়ে সব চুলোয় উঠেছিল, আজকে তাই হিসেব চুকিয়ে ফেলা যাক)
ব্রাজিল, লাতিন আমেরিকা নিয়ে আমার অনেক রকম ধারনা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ধারনাকে চারআনার পাত্তা দেয়না। পেলের দেশে গিয়ে রাস্তাঘাটে সাদাচামড়ার মানুষ দেখতে বেমানান লাগছিল। ইতিহাস পড়ে জানলাম আদিবাসী বা মাটির মানুষ যারা ছিল তাদের পর্তুগীজ শাসকেরা মেরে কেটে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছেন! প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল ওয়াইমিরা বলে একটা আদিবাসী গোত্র। ব্রাজিলের জেনারেলরা তখন আমাজনের মাঝ বরাবর রাস্তা বানাতে ব্যস্ত। আদিবাসী গোত্রের ঝামেলা তাদের বিরক্ত করল, মশামাছি মারার মতো তাই একরাতে হাজার দুয়েক মানুষকে মেরে এরা রাস্তা তৈরির পথে আর কোন বাঁধা অবশিষ্ট রাখলেন না।
যাই হোক, মূল গল্পে ফিরি। শনিবার সকালে ক্রিসের সাথে রওনা দিলাম MASP বা Museu de Arte de Sao Paulo এর দিকে। এই মিউজিয়ামকে নিয়ে আমার ব্যপক আগ্রহ। এই প্রথম সামনাসামনি বড় শিল্পীদের ছবি দেখার সুযোগ হবে। ছবি সামনাসামনি দেখলে আদৌ বেশী কিছু দেখা যায় কিনা আমার জানা নেই, তারপরেও দাপাদাপি উত্তেজনা।
১৯৪৭ এর তৈরি এই মিউজিয়ামটা অ্যাভেনিউ পলিস্তার একপাশে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝবার জো নেই! দুটো লেভেল, লেভেল টুতে স্থায়ী প্রদর্শনী, আর লেভেল ওয়ানে সাময়িক প্রদর্শনী। লিফ্ট নিয়ে গেল লেভেল টুতে। লিফ্টে থেকে নেমে প্রথমেই অবাক হবার পালা, দালির একটা স্কেচ, ক্যাভালিয়ের। এলোমেলো দ্বিধাহীন কিছু রেখায় আঁকা সেই ঘোড়সওয়ার, ভদ্রলোকের বিখ্যাত কোন ছবি নয়, আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি সেই বলিষ্ঠ রেখাগুলো..
এই জীবনে আর্ট মিউজিয়াম দেখিনি আগে, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যাবার শখ থাকলেও কাজের চাপে আর যাওয়া হয়নি। সাও পাওলো মিউজিয়াম চট করে ভালো লেগে গেল একটা কারনে, ছবি গুলো সময় ও স্টাইল অনুযায়ী আলাদা করে রাখা, সাথে নোট। নোট পড়ে নিলে চিত্রকলার জগৎ ও দর্শন কিভাবে পরিবর্তিত/বিবর্তিত হয় সেই বিষয়টা পরিস্কার হয়, ফলে ছবি উপভোগ করাটা অনেক সহজ হয়।
উদাহরন দেওয়া যাক, একদম শুরুতে ছবির মানুষরা সটান শক্তপোক্ত দাড়িয়ে থাকতেন। ক্রমেই এতে পারস্পেকটিভ যুক্ত হল, সটান শক্ত মানুষগুলো আরেকটু সহজ হয়ে বেঁকে বা হেলে দুলে পোজ দিতে শুরু করলেন। ছবির সাথে যখন এরকম চমৎকার বিশ্লেষন থাকে তখন ছবি দেখা অনেক উপভোগ্য হয়ে ওঠে, নিঃসন্দেহে!
স্কুলবয় (ভানগোহ)
ওয়াক টু টোয়ালাইট (ভানগোহ)
বাস্ট অফ আ ম্যান (পিকাসো)
অনেক বিখ্যাত শিল্পীর ছবি ছিল যাদুঘরে, এদের মধ্যে পিকাসো, ভানগোহ, রাফায়েল, রেমব্রান্ড, রেনোয়া, মনে, মানে, সেজান, দেলাক্রোয়া উল্লেখযোগ্য। তবে এটাও বলতে হবে যে, যাদুঘরের কীর্তিগুলো সেরা শিল্পীদের সেরা কর্ম নয়। দুজন শিল্পীর ছবি একটু আলাদা করে টেনেছে, প্রথম জন হলে সান্দ্রো বত্তিচেল্লী। বত্তিচেল্লীর নারীদের নিয়ে কবিতা পর্যন্ত লেখা হয়েছে। বার্থ অফ ভিনাস বহুদিন ওয়ালপেপার ছিল আমার কম্পিউটারে। বত্তিচেল্লীর কন্যাদের সামনা সামনি দেখার সুযোগ কি হারানো চলে?
ছবিটার নাম শিশুসন্ত জন বাপ্টিস্টের সাথে কুমারী মেরি।
দ্বিতীয় ছবিটা দেখলে আমার ধারনা আরো অনেক সচল একটু হলেও পুলকিত হতেন, শিল্পীর নাম জাকাপো তিনতোরেত্তো, মৃত্যূপথযাত্রী যিশুর ছবি। মনে পড়ে সত্যজিতের "টিনটোরেটোর যিশু"? এই সেই শিল্পী..
যাই হোক, আরেকটা ছবির গল্প না বললে মিউজিয়াম কাহিনী অসম্পূর্ন থেকে যায়। ছবিটা পিকাসোর, নাম Portrait of Suzanne Bloch, ১৯০৪ এ আঁকা। পিকাসোর "ব্লু পিরিয়ড" এর অন্যতম কীর্তি।
২০০৭ এর ২০শে ডিসেম্বর আরেকটি ছবির সাথে এই ছবিটাও চুরি যায়। চোরেরা মাত্র তিন মিনিট সময় নেন চুরি করতে। মাস খানেক পর এই ছবিটি আবার উদ্ধার করা হয়। ছবিটার দাম খুব বেশী ছিল না, মাত্র ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার...
ঘরের কোনায় দাড়িয়ে যখন রঁদ্যার একটা ভাস্কর্য দেখছি, তখন ইয়ের ভাই ক্রিস এসে হাজির। শালার চীনেটা বহুক্ষন ধরে ঘ্যানঘ্যান করছে, আর্ট মিউজিয়াম তোর সয় না, তো আসিস ক্যান সাথে? বললাম লেভেল ওয়ান দেখে নীচে নামবো। ব্যাটা বিরস বদনে নীচে গেল। লেভেল ওয়ানে নতুন চীনে শিল্পীদের এক্সিবিশন চলছিল। চট করে দেখে নামলাম ছাগলটার খোঁজ নিতে। ছাগলের শখ হয়েছে ব্রাজিলিয়ান ম্যাক খাবে, তার ধারনা ব্রাজিলের মাংসের ম্যাকের স্বাদ আলাদা। কি যন্ত্রনা! শেষে টেনে নিয়ে গেলাম আগের দিনের রেস্তরায়।
খেয়েদেয়ে ক্রিসকে বলি, কই যাবে হে?
ইবিরাপুয়েরা পার্ক, সে বলে। পার্ক প্রায় দু মাইল দুরে, শালা হেটে হেটে যাবার ধান্দা করছে। বললাম ট্যাক্সি নিতে। সে মানবে না। মহা যন্ত্রনা, ভরদুপুরে ভরাপেটে এই বান্দরের সাথে আমি হাটতে রাজী না। "আমি তাহলে জু-তে যাই, তুমি পার্কে যাও গে", আমি বলে ফেলি
বদমাশটা ছোট চোখ আরো ছোট করে তাকায়। তারপর ওকে বলে হাটা দেয়। ট্যাক্সি নেব নিচ্ছি করছি, এমন সময় ক্রিসের দেখা আবার।
"কি চাস বাবা?"
"আমি রাস্তায় জিজ্ঞেস করলাম জু-তে যেতে কতোক্ষন লাগে, বলল ৪০ মিনিট তাই ব্যাক করলাম, আমার ধারনা ছিল জু-তে যেতে ২০০/৩০০ রিয়াইস লাগবে"
"চল চান্দু চল", দাঁত কিড়মিড় করে বলি আমি।
সাও পাওলো জু বিশাল, ট্র্যাভেল গাইডেও সুনাম করা। কিন্তু কিছুক্ষন ঘোরাঘুরির পর আমরা কিছুটা বিরক্ত হয়েগেলাম। আমাজনের পশুপাখি দেখার জন্যই আসা, সেখানে সাইবেরিয়ান টাইগার আর হাতি দেখলে ভালো লাগে না। ধারনা ছিল ভালো অ্যাভিয়ারি থাকবে, তাও নেই।
বিকেল ৫টার দিকে কিঞ্চিত বিরক্তি নিয়ে ফিরে এলাম আমরা দুজন।
পিপিলীকাভূক
আসার পথে রাস্তা দেখতে দেখতে আসি। সিগনালে গাড়ি থামে, এগিয়ে আসে ভিখারী কিশোর। দেখি ঠেলাগাড়ি ওয়ালা, আইল্যান্ডের উপরে বস্তি, তাতে হামাগুড়ি খাওয়া শিশু। সীমানা বদল হয়, ভাষা বদল হয়, দারিদ্রের চেহারা সেই একই থাকে। মুর্শেদের চিকিতা বিষয়ক কৌতুহলে ক্যামেরা বাগিয়ে থাকি। কিটিস কিটিস করে শাটার পরে, নারীমুখের ভান্ডার তৈরি হয় এসডি কার্ডে। ফিরে এসে যখন সেই ছবি দেখি তাতে মোহনীয় জেল্লার চেয়ে রোদেপোড়া পরিশ্রমী কিছু মুখ ভেসে আসে, মুর্শেদের চিকিতাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
রোববার কি করা যায়? দেখা গেল সাধ্যের মধ্যে করার তেমন কিছু নেই এক সমুদ্র সৈকত দেখা ছাড়া। সকালে উঠে মুড়িওয়ালার আসার বসে রইলাম। ব্যাটা শেষ মুহুর্তে বলে সে যাবে না, বুঝলাম অনেক দিন পর আয়েস করে ঘুমাবার সুযোগ সে ছাড়তে চায় না। কনসিয়ার্জকে জিজ্ঞেস করলাম সৈকত দেখার তরিকা। সে ম্যাপট্যাপ এঁকে দিয়ে সব বুঝিয়ে দিল। মেট্রো ধরে আমার গেলাম সাও পাওলো শেষ প্রান্তে জাবাকুয়ারা স্টেশনে। সেখান থেকে বাসে ৮৫ কিলো যাবার পর পৌছালাম গুয়ারুজা শহরে। তারপর ট্যাক্সি নিয়ে এনসিয়েদা সৈকতে। এনসিয়েদা জনপ্রিয় সৈকত, প্রচুর ঢেউ, কিন্তু পানি স্বচ্ছ না। না, এখানে টপলেস সুন্দরী ছিল না। ব্রাজিলের খুব সীমিত সৈকতে টপলেস সুন্দরীদের দেখা যাবে, তার সবই রিও-তে। তাই যারা ভাবছিলেন অরূপ কঠিন দাও মেরেছে, তাদের আশার গুড়ে বালি।
এনসিয়েদা সৈকত খুব সুন্দর না হলেও এর আকর্ষন প্রাণ চাঞ্চল্যে। সৈকত ভর্তি এতো মানুষ দেখলে কেমন মেলা মেলা ভাব চলে আসে।
সাধারন কাপড়েই সৈকত ধরে হাটতে থাকি, হাতে কায়দা করে ক্যামেরা ধরা যেন অলক্ষ্যে শাটার টেপা যায়।
এমন সময় একটা 'সাদা' শিশু দৌড়ে আসে, পর্তুগীজে কি যেন বলে হাসি মুখে। প্রথম খানিকটা ভয় পাই! ফকির নাকি? মাথা ঝাকাই, তোদের ভাষা পারি না রে পিচ্চি। একটু পরে একঝাঁক বাচ্চা মেয়ে এসে ঘিরে ধরে। খিলখিল করে কি যেন বলে। আমি লাজুক হাসি দিয়ে আগে বাড়ি। কিছুদূর যেতেই আবার সেই বালক.. এবার মনযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি, আই ভিনসেন্জো। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করে, হোয়াট ইজ "মাই" নেম? একটু আগে সম্ভবত সে শিখে এসেছে কারো কাছ থেকে। "ইওর" এর জায়গায় "মাই" বসিয়ে ফেলেছে ভুল করে।
আমি হ্যান্ডশেক করে নাম বলি। ছেলেটা বিপুল আনন্দে খুশি হয়ে ফিরে যায়।
ধীরে ধীরে বিষয়টা পরিস্কার হয়। মুড়িওয়ালা বলেছিল ব্রাজিলে ইন্ডিয়ান (বাংলাদেশও এতে পড়ে কিনা) চেহারার মানুষের আলাদা কদর। আমরা যেমন সাদা চামড়া দেখে টাসকি খাই এরা ভারতীয় উপমহাদেশের শুনলে আরো টাসকি খায়। কি অবিশ্বাস্য!!!! দুনিয়ায় তাহলে একটা দেশ আছে যেখানে আমার চামড়া কোন সমস্যা না??
আবেগ তাড়িয়ে আবার মন দেই, মুর্শেদের চিকিতা খোঁজায়। ইশপের শিক্ষা, চিকিতারা শুধু টেলিভিশনেই থাকে, বাস্তবে না
কিছু ছবি দেই। মন ভরে দেখে নেন যা দেখার
যে যেটায় খুশি
গুয়ারুজার মেয়ে
মারমেইড বানাতে ব্যস্ত যুবকের দল
উল্টো সাইনবোর্ডের রাস্তা, এই রাস্তায় সব সাইনবোর্ড উল্টো!
-------------------------------
ফেরার পথে রাস্তায় প্রচুর ফাভেলা দেখলাম। ফাভেলা অনেকটা বস্তির মতো, ঢাকায় যেভাবে চুরি করে বিদ্যূৎ নেয়, ফাভেলাতেও তেমন করে। কি অদ্ভুত! এতো বিশাল দেশেও মানুষের আশ্রয়ের সমস্যা!
দেখতে দেখতে ফেরার দিন চলে এলো। তিন তারিখ রাত একটায় ফ্লাইট, মুড়িওয়ালা এলো এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। মন খানিকটা খারাপই। মুড়িওয়ালার সাথে একটা আলাদা সম্পর্ক। বেচারার বাড়িতে যাওয়া হল না, শখ ছিল রেঁধে খাওয়াবো। কাজের চাপে আর হয়নি। মুড়িওয়ালায় খুব আশায় আছে আমাদের প্রজেক্টে ঢোকা নিয়ে। বেচারা একা পড়ে গেছে এই জঙ্গলে। শেষ একটা সিগারেট ফুঁকে আমি বোঁচকা হাতে ঢুকে যাই। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে মুড়িওয়ালার চেহারাটা। এমিরাতসের মিষ্টি মেয়েটা সবঠিকঠাক করে দেয়।
বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে বলি, "ওব্রিগাদো.."
না নাজানা মেয়েটাও কিছুবলে প্রত্যুত্তরে। আমি হাসি, সেও হাসে। পা বাড়াই, সিকিউরিটি পার হই, ইমিগ্রেশন পার হই। ঝকঝকে একটা বোয়িং ৭৭৭ অপেক্ষা করে আছে। গুয়ারুলঅস এয়ারপোর্টের দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে মনে মনে বলি, "থ্যাংক ইউ সাও পাওলো! কতোই না দেখার ছিল এ জীবনে!"।
Sunday, December 7, 2008
ওব্রিগাদো সাও পাওলো - ০৩
বিছানা থেকে উঠে দেখি তিনটা বাজে, মন খারাপ হলে ঘর থেকে বের হওয়া হল উত্তম ঔষধ। অচেনা দেশে কোথায় যাব? শেষে মনে হল আর্ট মিউজিয়ামে যাই, ক্রিসকে সাথে নিলে ঠিকমতো দেখা যাবেনা, গেলে শালাকে বাদ দিয়ে যাওয়াই ভালো।
মিউজিয়াম এভিনিউ পলিস্তায়, ট্যাক্সিভাড়া তেমন হবার কথা না। একটা চিরকুটে নামটা লিখে বের হলাম ট্যাক্সি নিতে। সাও পাওলোর রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্যাক্সি পাওয়া যায়। কেউ ভাড়া নিয়ে হাঙ্কিপাঙ্কি করে না, মিটারই মহেশ্বর! ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গিয়ে চিরকুট দেখাই। উঠব যখন, তখন শুনে "অরূপ! অরূপ!" বলে ডাক। রাস্তার ওধারে ক্রিস আর আলফ্রেড সাভারিআপ্পান। আলফ্রেড এসেছে আগে, মুড়িওয়ালার মতো সেও সেকন্ডেড এখানে। ডাকছিলো সেই।
মহাবিরক্ত হয়ে গেলাম। শালারা একটুও শান্তি দিবে না! আলফ্রেড হল রমনীখেকো। তারা কুকাহিনী শুনলে লক্ষী ছেলেরাও বদ হয়ে যাবে, ব্রাজিল এসেই সে সুদর্শিনী সঙ্গিনী জুটিয়ে ফেলেছে। সে দেখি মিটিমিটি করে হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে..
"ইফ ইউ ওয়ান্টেড টু গো টু আ রেড লাইট সিটি হোয়াই ডিডন্ট ইউ টে মি লাস্ট নাইট? দিজ প্লেসেস আর রিস্কি, ইউ নো... লেট মি সি দ্য নেম", বলেই খস করে সে আমার হাত থেকে চিরকুটটা খসিয়ে নেয়। আমি বলি, "কয় কি মমিনের বাপ!"
চিরকুট পড়ে বেচারার বিরক্তির সীমা থাকে না। ব্রাজিলে লোক আসে ফুর্তি করতে, এই ছাগল যাবে মিউজিয়ামে! আমি নাছোড়বান্দা, মিউজিয়ামে না গেলে শহর ধরে হাটতে রাজী আছি, কিন্তু ক্লাবে যাব না!
আলফ্রেড রাজী হয়ে গেল, তিনজনে পলিস্তার রাজপথ ধরে হাটা শুরু করলাম।
এই ফাঁকে কিছু পরিসংখ্যান টানা যাক। ব্রাজিলের মানুষের প্রায় অর্ধেকই ব্রাংকা (সাদা, ইউরোপিয়ান), ৪২% পারডো বা মিশ্রজাত (ব্রাউন), ৭% প্রাটো (কালো) আর সামান্য কিছু এশিয়ান (মূলত জাপানী) ও আমেরিন্ডিয়ান। দাসপ্রথা বিলুপ্তির পরে এখানকার ক্ষমতাধরেরা খানিকটা ভয় পেয়ে যায়, তাই ইমিগ্রেশনের দরজা খুলে দিয়ে বিপুল পরিমান ইউরোপিয়ানকে ডেকে আনা হয় ব্রাজিলে। ইতালি, জাপান আর মিডল ইস্টের বাইরে সবচে' বেশী ইতালিয়ান, জাপানি আর আরবদের দেখা মিলবে এই দেশে। রেসিয়াল প্রবলেম নিয়ে প্রশ্ন করলাম অনেকেই, সবাই বলল এখানে এসব সমস্যা নেই। পরিসংখ্যান বলে অন্যকথা, অশিক্ষা, বেকারত্ব, শিশুমৃত্যূর হার কালো আর পারডোদের বেশী। অফিস আর হোটেলের সব ভালো পজিশনে সাদাদেরই রাজত্ব, নাম দেখেই বোঝা যায় এরা ইউরোপিয়ান রক্তের মানুষ।
এভিনিউ পলিস্টায় হাটতে গিয়ে সাদা আর জাপানি মানুষই বেশী চোখে পড়ল (মুর্শেদের জন্য লাটিনা চিকিতা খুঁজে পেলামই না শেষ পর্যন্ত)। বুকে কাছে ক্যামেরা ধরে ছবি তুলেই যাচ্ছি। আলফ্রেড সাবধান করেদিল ছিনতাই হতে পারে। এতোটা সাবধান করার দরকার ছিল না, কারন পলিস্তা শানদার এরিয়া, পুলিশ-পাহারা কম না, হুদাই ভয় ধরিয়ে ব্যাটা আমার ছবি তোলার বারোটা বাজিয়ে দিল।
অনেক দিন পর এরকম চমৎকার রাস্তা ধরে হাটতে ভালো লাগছিল। দুপাশে নানারকম দোকান। বই এর দোকানে থামলাম, সেখানে প্লেবয় সাজানো থরে থরে, তার ঠিক নিচেই আবার কাফকা। সব পর্তুগীজে, তাই কেনা হল না কিছুই।
তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি, সাথে ফুরফুরে বাতাস। মেজাজ কখন ভালো হয়ে গেছে টের পাইনি। আলফ্রেড খেতে নিয়ে গেল এক রেস্তরায়। ব্রাজিলে খাবার মানেই বিশাল আয়োজন, খেয়ে শেষ করা যায় না। তাই আমরা পাস্টেল খাব ঠিক করলাম।
পাস্টেলকে চারকোনা কিমাপুরী বললে ভুল হবে না (আহা! কতোদিন পুরী খাই না!)। কিমায় ঝালমসলা কম, কিন্তু খেতে চমৎকার।
পাস্টেল পর্ব শেষ হলে আলফ্রেড গেল গার্লফ্রেন্ডের খোঁজে, আমি আর ক্রিস গান ফিরতি পথে হাটা দিলাম। মালেশিয়ায় থেকে থেকে শীত কি জিনিস মনে থাকে না। সাও পাওলোর মিষ্টি ঠান্ডায় বারো হাজার মাইল দূরে আমার মনে পড়তে থাকে ধানমন্ডির রাস্তা, এলিফেন্ট রোডের ভীড় আর নীলক্ষেতের তেহারী। আমাদের কি বিচিত্র মন। আমরা যা মনে প্রাণে ত্যাগ করে আসি, সেসবই হৃদয়ের গভীরে পাকাপোক্ত স্থান করে নেয়।
হোটেলে ফিরতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। শানদার হোটেল বলে লাইভ মিউজিক আছে। লবিতে বসি, মুড়িওয়ালা মেক্সিকান খাওয়াতে নেবে রাতে। অপেক্ষা তার জন্য তাই। চামড়ামোড়া সোফায় গা এলিয়ে দেই, হঠাৎ কানে একটা চেনাসুর বাজে..
"Tall and tan and young and lovely
The girl from Ipanema goes walking
And when she passes, each one she passes goes - ah"
এই গানটা শুনেছিলাম সিনাত্রা সিডিতে, নাম দ্য গার্ল ফ্রম ইপানেমা। ইপানেমা, রিও ডে জেনেইরোর বিখ্যাত সৈকত।
ইপানেমা সৈকতের ভেলোসো বারে বসে, গীতিকার টনি জোবিম মিউজিক্যালের জন্য গানের কাজ করতেন। আর প্রতিদিন এলোইসা পিন্টো নামের মেয়েটি হেটে যেত বারের সন্মুখের পথ ধরে। এলোইসাকে দেখেই একদিন লিখে ফেলেন এই গানটি। গানটি পরে দুনিয়া জুড়ে খ্যাতি পায়। সিনাত্রা, ন্যাট কিং কোল, অ্যান্ডি উইলিয়ামস, ম্যাডোনার মতো নামজাদা অনেক শিল্পী গাইতে থাকেন গানটি। এলোইসা হয়ে ওঠেন ব্রাজিলের আইকন। যশকে ভর করে মহিলা দুপয়সা করে নিতে ভুলে যাননি, সুযোগ পেয়ে প্লেবয়ের প্রচ্ছদেও জায়গা করে নেন।
ইউটিউবের কল্যানে শুনুন "দ্য গার্ল ফ্রম ইপানেমা", গাইছেন জোবিম ও অ্যান্ডি উইলিয়ামস্:
শখ ছিল রিও যাবো। খুব দূরেও না জায়গাটা। আনন্দের শহরটাকে দেখব না তা কি করে হয়। কিন্তু সব শখ পূরন হয় না। নীরবে রিও যাবার পরিকল্পনাটা বাতিল হয়ে যায়। একটু পরে মুড়িওয়ালা আসে। টল-এন-টেন্ডার-ইয়াং-এন-লাভলি শিস বাজাতে বাজাতে পা বাড়াই ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে..
ওব্রিগাদো সাও পাওলো - ০২
অনেক গুলো রাজ্য নিয়ে গঠিত ব্রাজিল, সাও পাওলো হল সাও পাওলো রাজ্যের রাজধানী। ব্রাজিলে এটাই সবচে' বড় আর জনবহুল শহর। সাও পাওলো শহরের মানুষদের বলা হয় "পলিস্তানো" আর সাও পাওলোর ডাকনাম হল "সামপা"। ব্রাজিলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এই শহর। সাও পাওলো যদি একটা দেশ হতো তবে এর অর্থনীতি হল বিশ্বের ৪৭তম, যা কিনা মিশর আর কুয়েতের উপরে, হাঙ্গেরী বা নিউজিল্যান্ডের সমান আর ইজ্রায়েলের প্রায় ৮৫%! যানজটের দিক থেকেও এই শহর অনেক এগিয়ে, কোথাও যেতে হলে ঘন্টা খানেকের প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হয়। সেই কারনেই এখানে হেলিকপ্টারের ব্যবসা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বর্তমানে প্রায় ৪০০ হেলিকপ্টার বছরে ৭০,০০০ হাজারের মতো ফ্লাইট পরিচালনা করছে, উঁচুতলা ভবনের ছাদে প্রায়শই তাই দেখা যায় ছোট ছোট হেলিপ্যাড। এখানকার আবহাওয়া বড় পাগলাটে, এই ঠান্ডা তো সেই গরম। যাবার আগে দেখেছিলাম ১৫ ডিগ্রি, গিয়ে পেলাম ২২! লোকে আবহাওয়ার পূর্বাভাষে তাই একদমই পাত্তা দেয়না (সাও পাওলো নিয়ে খুঁটিনাটি এখানে, মূল গল্পে ফিরে যাওয়া যাক বরং)
আমাদের রাখা হয়ে ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র অ্যাভিনিউ পলিস্তার পাশেই, হোটেলের নাম গোল্ডেন টিউলিপ। অ্যাভিনিউ পলিস্তা টানা লম্বা এক রাজপথ, তারপাশেই শহরের যতো বড় বড় বানিজ্যিক ভবন আর দোকানপাট, রাজপথের সমান্তরাল বয়ে গেছে অনেকগুলো বড় গলির মতো রাস্তা, তাদের একটা হল অ্যালামিদা সান্তোস, গোল্ডেন টিউলিপ সেখানটাতেই। ওয়ার্কশপ শুরু ২৪শে, দুপুর দুটোয়। এই ফাঁকে শহরটা ঘুরে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। রাস্তায় নামতেই পছন্দ হয়ে গেল, বড় হয়েছি এলিফেন্ট রোডে। তাই দোকানপাট রাস্তাঘাটের প্রতি একটা টান আছে, মন্ট্রিয়লের সেন্ট ক্যাথরিন স্ট্রিটে ঘুরে বেড়াতাম এই কারনে। অনেকেই বলেছিল আইনশৃঙ্খলা ভালো নয় ব্রাজিলে। সেই কথাটা এমনভাবে মাথায় গেঁথে গেল যে শান্তিমতো ছবি তুলতে পারলাম না, ফন্দি করলাম, খোলা ক্যামেরা বুকে ঝুলিয়ে ঘুরবো, কিছু দেখলে শাটার টিপে দেব চুপচাপ, যা ওঠে উঠুক। এই চোরাই পদ্ধতি ছবি তোলার ফল হল অদ্ভুত, সব ছবি বাঁকা আর উল্টোপাল্টা কমপোজিশন। আবার বাঁকা পারস্পেকটিভের জন্য কিছুটা শৈল্পিকও লাগে।
শখ ছিল ইবিরাপুয়েরা পার্কে যাব, সঙ্গীত ভাই ঘ্যানঘ্যান করাতে তা বাদ দিলাম। মেজাজ এতো চড়ে গেল যে ঠিক করলাম লাঞ্চ আলাদা করবো। শালাকে রুমে পাঠিয়ে আবার বের হলাম, ক্ষিদে ভালোই পেয়েছে। রাস্তার চৌমাথায় একটা রেঁস্তরা দেখা গেল, ঝটপট তাতেই ঢুকে গেলাম। মেনু দেখে পুরো জব্দ, পর্তুগীজে লেখা। ওয়েটার এলো অর্ডার নিতে, মহা বিপদ! চোখ পড়ল দেয়ালে টানানো খাবারের ছবিতে। ব্যাটাকে টেনে নিয়ে গেলাম, আঙুল দিয়ে দেখালাম, ইহাই খাইতে চাই! সেই "ইহা"টা দেখতে ছিল একদম আলু দিয়ে ঝাল গরুর মাংস আর ভাতের মতো। ব্রাজিলে এমন জিনিস পাওয়া যাবে আশা করিনি। মুড়িওয়ালা প্রায়ই ঘ্যানঘ্যান করে ব্রাজিলের খাবার ভালো না। ভাবলাম, ব্যাটা খোঁজখবর রাখে না ঠিকমতো। খেতে গিয়ে দেখি গোস্তে ঝাল নেই, লবনও কম। কি আর করা, সেটাই খেলাম, বিল এল সাড়ে দশ হ্রিয়াইস (সিঙ্গুলার Real, প্লুরাল Reais), প্রায় সোয়া চার মার্কিন ডলারের মতো। ভালোই সস্তা, পরে টের পেলাম এটা গরিবানা হোটেল। একটু ভালো কোথাও খেতে গেলেই বিশ/পঁচিশ হ্রিয়াইস খরচ হয়ে যায়। আর ফাইন ডাইনিং হল তো এক ধাক্কায় একশ ছাড়িয়ে যায়!
দুপুরে ওয়ার্কশপ শুরু হল। ব্রিটিশ সাহেবরা কিভাবে দুনিয়া দখল করেছিল সেটা খানিকটা টের পেলাম। এখানে এসেই এরা পর্তুগীজ শিখে নিয়েছে মাস তিনেকের মধ্যে। বাকিদেরও ঠ্যালা দেওয়া হয়েছে পর্তুগীজ শেখার জন্য। ফলে আমাদের মুড়িওয়ালাও এখন কাজ চালানোর মতো পর্তুগীজ জানে। যাই হোক, এখানে যে প্রজেক্টে আসা তা বছর দুয়েক আগে শুরু হয়েছিল। পরে বন্ধ হয়ে যায়, কদিন আগে আবার শুরু হয়েছে। সেই একই গল্প.. ঘ্যানর ঘ্যানর..। ৫টা নাগাদ আর পারি না, শরীর ভেঙ্গে পড়ে, জেটল্যাগ! হবেই তো, দশ ঘন্টার তফাৎ!!
ভাবলাম দিনশেষে ঘরে গিয়ে ঘুমাবো, শুনি রাতে মহাশয়রা যাবেন মাংস খেতে। ব্রাজিলের বারবিকিউ এর নাম শুনেছি, লোভে পড়ে শ্রান্ত শরীরে হাজিরা দিলাম। দেখি জনগন কাইপিরিনিয়া গিলছে। কাইপিরিনিয়া হল ব্রাজিলের জাতীয় ককটেইল, লেবুর রস, চিনি আর কাশাসা দিয়ে তৈরি হয় এই মাল। আমি মার্গারিটার পাংখা, তাই নিলাম গভীরাগ্রহে। লোক সাবধান করলো, বাপুহে কম খা! কে শোনে কার কথা, ৪টা খাবার পর মাথা গেল আউলে। ভাগ্যিস রুম পর্যন্ত হেটে ফিরতে পেরেছি। এর পর আরো আটদিন ছিলাম, অ্যালকোহলের ধারেপাশে যাইনি, ক্যারিয়ার টিফিন ক্যারিয়ার বানাবার কোন দরকার নাই মামা!
পরদিন সেশন শুরু হল সাড়ে আটটায়, থ্যাংক্স টু জেটল্যাগ, পাড় মাতাল হবার পরও ঠিক ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। অসহ্য যন্ত্রনা সারাগায়ে, ডান পায়ের হাঁটুতে ব্যথা, সাথে ভয়াবহ রকম অ্যাসিডিটি! জান যায় যায় প্রায়। কোনমতে দিন শেষ করে বের হলাম মুড়িওয়ালার সাথে। মুড়িওয়ালা আমার একবছরের বড়, গ্রেডেও এক গ্রেড উপরে। কিন্তু তার সাথে যাবতীয় মস্করা আর তামাশা করি নির্দ্বিধায়। সেও কিঞ্চিত খুশি দেশের মানুষ পেয়ে। সেই আনন্দে সে আমাদের নিয়ে গেল চুরাস্কারিয়াতে। লাতিন আমেরিকায় চুরাস্কো মানে হল গ্রীল মাংস, আর যে রেঁস্তরায় এজিনিস সার্ভ করে তাকে বলে চুরাস্কারিয়া।
চুরাস্কো লাতিন আমেরিকার প্রায় সবদেশেই চালু আছে, তফাৎ হল মাংসের কাট আর প্রিপারেশনে। আমরা যেখানে গেলাম সেই দোকানের নাম ফোগো দে শাও। ট্যাক্সিওয়ালা তো দাবী করেই বসলো, এটা নাকি মাইকেল শুমাখারের পছন্দের জায়গাগুলোর একটা।
ফোগো দে শাও খানিকটা বুফের মতো। জনপ্রতি নির্দিষ্ট অংক দিয়ে ঢুকতে হয়। মনভরে সালাদ নিয়ে টেবিলে বসবেন। বেয়ারা এসে পানীয় আর একটা কাগজের চাকতি দিয়ে যাবে। একটা দিক সবুজ, লেখা "আরো চাই", আরেকটা দিক লাল, লেখা "না, ধন্যবাদ"। যতোক্ষন সবুজ দিকটা খুলে রাখবেন, বেয়ারা একটু পর পর এসে নানারকম শিকে গাঁথা কাবাব, আপনার পছন্দমতো অংশ (রেয়ার, মিডিয়াম বা ওয়েলডান) থেকে কেটে দিয়ে যাবে। পেট ভরে গেলে লাল দিকে মেলে রাখুন। কেউ বিরক্ত করবে না।
স্কিউয়ারে গেঁথে এরা মাংস স্লোরোস্ট করতে থাকে। মসলা বলতে শুধু লবন। যারা রেয়ার/মিডিয়াম রেয়ার পছন্দ করেন তাদের বেশ ভালো লাগবে, সন্দেহ নেই। ব্রাজিলে ফিলে মিনিও আর রাম্প স্টেক বেশী জনপ্রিয়, কুঁজের মাংসও এদের বেশ পছন্দ। ফোগো দে শাও-এ খাওয়াতে বেচারা মুড়িওয়ালার প্রায় ২৮০ হ্রিয়াইস খসে গেল। স্বীকার করতেই হবে, ভিন্ন পরিবেশনাই হোক আর নতুন ঘরানার খাবারই হোক, ডিনারটা ছিল মনে রাখার মতো।
এর পরদিন অফিস থেকে নিয়ে গেলে ফিগুয়েরা রুবাইয়াতে। বিখ্যাত রেঁস্তরা, ১৯০ হ্রিয়াইস মাথাপিছু, খাবারও সেইরকম। মাংসখোরদের ভীষন প্রিয় জায়গা বোঝাই যায়। আমার চোখ ছিল অবশ্য গ্রীলড সার্ডিনের দিকে। এই জিনিসটা এরা পেয়েছে পর্তুগীজদের কাছ থেকে। টাটকা সার্ডিন আস্ত, অলিভওয়েল আর লবন মাখিয়ে চড়িয়ে দিয়েছে গ্রিলে, গ্রিল থেকে যা সুগন্ধ বের হচ্ছিল তা বলার মতো না। যারা ইলিশের গন্ধ শুঁকে পাগল হন, তারা বিষয়টা কল্পনা করতে পারবেন। সুযোগ পেলে এই স্টাইলে ইলিশ গ্রিল করে দেখতে হবে। রুবাইয়াতের আরেকটা খাবার খুব বিখ্যাত, গ্রিলড বাচ্চা শূকর। ২০/৩০ দিন বয়সের আস্ত শূকর ছানা গ্রিল করা হয় মহা আয়োজন করে। শখ ছিল, খাওয়া হল না, এই দুঃখ কোথায় রাখি?
তবে ব্রাজিলে অনেক পুরোনো একটা শখ মিটে গেল। স্টেক তাতার (বা স্টেক টার্টার) হল তাতারদের খাবার । মধ্যএশিয়ার তাতার জাতির হাতে সময় ছিল না রেঁধে খাবার, তাই কাঁচা মাংস মসলাপাতি মিশিয়ে ঘোড়ার স্যাড্ল এর নীচে রেখে তারা যাত্রা শুরু করতো। গন্তব্যে পৌছাতে পৌছাতে মাংস নরম হয়ে খাবার উপযোগী হয়ে যেত। কাঁচা মাংসের এই খাবারই পরে ইউরোপে বেশ জনপ্রিয় হয়। কাঁচা মাংসে সংক্রমনের ভয় থাকার কারনে এটি খুব সহজলভ্য খাবার নয়। ফুড চ্যানেলে আগেই দেখেছিলাম, কিন্তু পাব কই, নিজে বানাতেও সাহস হয় না। তো সেদিন, লাঞ্চে দেখি রব ডিক্সন প্লেট হাতে শেফের সামনে দাড়িয়ে, সামনে বাটিতে কুচানো কাঁচা মাংস।
"ইউ আর হ্যাভিং র' মিট?"
"ইয়া, ইটস কলড স্টেক টাটার", রব হাসতে হাসতে বলে।
বুড্ঢা রব ডিক্সন খাবে, আর আমি কেমনে বাদ থাকি? নিলাম আমিও। মাংস, কাঁচা ডিম, পেয়াজ, কেপারর্স আরো হাবিজাবি দিয়ে শেফ অনেকক্ষন ঘুটা দিলো। তারপর তেকোনা ছোট ছোট টোস্ট দিয়ে প্লেটে সাজিয়ে দিল। সত্যি বলতে শুরুতে খানিকটা অস্বস্তি হয়েছিল, তারপরেও সাহস করে মুখে দেই। টোস্ট দিয়ে খেতে ভালোই লাগছিল। এরকম আরেকটা জবরদস্ত খাবার আছে, যাকে বলে সেভিচে। মনে ছিল না, না হলে এজিনিসও একবার খেয়ে দেখা দরকার...
যারা ভাত পছন্দ করেন তাদের জন্য ব্রাজিল শান্তির দেশ, এরা গভীরাগ্রহে ভাত খায়, সাথে খানিকটা তেল দিয়ে রাঁধে বলে হালকা পোলাও পোলাও ভাব চলে আসে। ভাতের সাথে বীনের তরকারি থাকবে অবধারিত ভাবে। এদেশের মানুষ যদি একটু ঝাল-মসলা খাওয়া শিখতো তাহলে চাইনীজ, ইন্ডিয়ানের পাশাপাশি ব্রাজিলিয়ান কুইজিনও জনপ্রিয় হতো সন্দেহ নেই। আমাদের মুড়িওয়ালা এখনও রাঁধতে শিখেনি। সে দোকান থেকে আনিয়ে খায় বলে মাসে প্রায় ৮০০ হ্রিয়াইস খসে যায় পকেট থেকে। বাবা-মা-দের উচিত লেখা-পড়া-নাচ-গানের সাথে পোলাপানদের রান্নাবাটি শেখানো। প্রবাসী সচলরা আমার সাথে একশতভাগ একমত হবে সন্দেহ নেই
এই পর্ব শেষ করি ছবি দিয়ে। সামনের পর্বে গল্পের মোড়ক আরেকটু খোলা যাবে.. (চলবে)
বিল্ডিং এর ছাদে হেলিপ্যাড, তাতে হেলিপক্ষী!
সঙ্গিনী চাই? বিশ বছরে বয়সী সেনসুয়াল রমনী?
অ্যাভিনিউ পলিস্তায় ক্রিসমাসের যাত্রা!
ইবিরাপুয়েরা পার্কের ভাস্কর্য (বাংলাদেশে তো ক'দিন পরে এসব দেখা যাবে না)