Sunday, December 23, 2007

ঢাকার চিঠি - ০৩

পাখি আমার একলা পাখি - চিল (২১/১২/০৭)
পাখি আমার একলা পাখি - চিল (২১/১২/০৭)

বাংলা মা তার প্রবাসী সন্তানদের দেশে স্বাগত জানানোর ঐতিহ্যবাহী রীতি কোনদিন ভুলবে না। আমার ক্ষেত্রে গতবার ব্যতিক্রম হয়নি, এবারো হল না। আসার ২য় দিনে পেট নেমে গেল, ৩য় দিনে সর্দি, ৪র্থ দিনে কাশি আর শ্বাসকষ্ট। আমার জন্মদাত্রী মা অবশ্য এই ভালোবাসাটা টের পান না, বরং যথাসম্ভব বিচলিত হয়ে যন্ত্রনার সৃষ্টি করেন। মালেশিয়া থেকে প্যানাডল অ্যাক্টিফাস্ট পাঠিয়ে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত যে সেটা আমারই খেতে হবে ধারনা ছিল না।

ঈদের আগের দিন এক কাজিনের সাথে সাথে গভীর রাত পর্যন্ত গালগল্প হল। ভোর ৫টায় ঘুমাতে গেলাম। বাবার হয়তো ক্ষীন আশা ছেলে অন্তত ঈদের নামাজ পড়তে সঙ্গী হবে, কিন্তু যে ছেলে শেষ কবে ঈদের নামাজে গেছে মনে করতে পারে না তার কাছে এমন আশা না করাই শ্রেয়।

ঈদের দিন, অ্যাজ ইউসুয়াল, বোরিং গেল। লম্বা সময় লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমালাম, ইত্যবসরে শরীর ঐতিহ্য মেনে খারাপ হওয়া শুরু করলো।

কেএল-এ থাকলে ঈদের নাটক দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। এবারে ঢাকায় এসে ধাক্কাই খেলাম। BDBangla তে বিজ্ঞাপন ছাড়া দেখে অভ্যেস হয়ে গেছে। কার সহ্য হয় ৩০ মিনিটের নাটকের মাঝে ছয় ছয়টা ৫ মিনিটের কমার্শিয়াল ব্রেক হজম করার! হুমায়ূন ভাই এর নাটকে সবগুলো চ্যানেল সয়লাব। আঙ্কেলের দিন শেষ। উনি বোধহয় SMC এর মতো কম্পিউটারে নাটকের ফর্মূলা ঢুকিয়েছেন, পারমুটেশন কম্বিনেশন করে ছাড়েন কদিন পর পর..

হুআ দাদুর নাটকের চেয়ে মোসা ফারুকীর নাটকগুলো কিঞ্চিৎ উন্নততর, তবে তার কারন নাটকের নাট্যমান নয়, বরং শ্রেফ নির্মানশৈলী। "কবিবলেছেন" দেখে খারাপ লাগেনি। ওয়েল মেড পর্নো দেখেও ভালো লাগে। ফারুকী এ পথে হাটলে কাক্কুর মতো অবস্থা হতে দেরী নাই।

আজকে দুটি অনুষ্ঠান দেখে আমি সোফা থেকে পড়ে গেছি। একটি হল গানের ম্যাগজিন অনুষ্ঠান, দেখাচ্ছিল ইসালামিক টিভিতে। ইসলামী গানে বাদ্যযন্ত্রের ভূমিকা থাকার নিয়ম নেই মনে হয়, এখানেও ব্যতিক্রম নয়। তবে দন্ডায়মান এক ভদ্রলোক (কবি মুজিব মেহেদী দেখলে বিপদ আছে!) যখন পান্দারিক (আরবী পার্কাশন ইন্সট্রুমেন্ট) বাজাতে শুরু করলেন আমি তখন হতবাক, "সাব্বাশ! বাঙ্গালী এখন ড্রামস কিবোর্ড ফেলে পান্দারিক ধরেছে!!"
দি পান্দারিক প্লেয়ার
দি পান্দারিক প্লেয়ার

দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটেছে ঘন্টা তিনেক আগে। চ্যানেল আই-তে হুমায়ূন মামার নাটক হবে, কিন্তু তার পরিচালক কোন এক সময়ের নায়িকা রোজিনা। ভদ্রমহিলা বয়সে আমার খালার সমান। তবে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পরিচালনার কোন গল্প আমার জানা ছিল না। নাটকের নাম "সম্পর্ক"। নাটকটা পুরো দেখতে পারলাম না, ভুদাই ঘুড়া আর সমন্বিত বাঘের ডায়েটে যেতে বাধ্য করলেও পারতাম না। কেন? কি দর্কার বলার। আপনাদের জন্য কিছু অংশ YouTube এ তুলে দিয়েছি। বুঝে নিন কি মাল চলে এখন..





এসব কারনে ঈদের নাটক দেখা বন্ধ করেছি। কেএল গিয়ে সময় নিয়ে দেখা যাবে। না হলে তো সিডি/ডিভিডি আছেই।

মইনুদ্দীনকে নিয়ে মেজাজ খারাপ। সে আমাদের পাইলট। ঢাকায় এসেই লক্ষ্য করলাম সে ৪০ উপরে গাড়ি চালায় না, সেই রহস্য যখন সমাধান হল ততক্ষনে আমার প্রায় হাজার পনের টাকা খরচ হয়ে গেছে গাড়িটার জন্য। গাড়িটাকে যখন একটু সাইজে আনলাম, তখন কাল রাতে গ্যারেজের পিলারের সাথে ধাক্কা মেরে ব্যাটা পিছনের একটা দরজা বসিয়ে দিল (কঠিন ইচ্ছাশক্তি আর গাঁজা না খেলে কাজটা করা খুবই কঠিন)। কারো চাকরী খেতে ভালো লাগেনা, এরটা খেতে হবে। কারন এর আগেও একাধিক ঘটনার নায়ক সে। বাসার গাড়িটার অবস্থা বেশ খারাপ। গাড়ি বদলানো জরুরী। এর হাতে নতুন গাড়ি দেওয়া আর পাশের বাসার বিড়ালটাকে ড্রাইভ করতে বলার মধ্যে তেমন ফারাক নাই। পৃথিবীতে কতো নিষ্ঠুর কাজই না করতে হয়..

যাওযার আগে দুটা পলিটিকাল গসিপ শেয়ার করি। যদিও এখন ঢাকার রাস্তায় গসিপ শোনা খুব কঠিন, (জানের মায়া তো সবারই আছে) তারপরেও সিগারেট কেনার সময় কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করি। যেহেতু গসিপ তাই কান না দেওয়াই ভালো।

১. দৈনিক সংগ্রামের ১৯৭১ সালের সকল আর্কাইভড কপি ধ্বংস করতে নেমেছে একটি রাজনৈতিক দল। যে হারে সব পত্রিকায় সংগ্রাম থেকে রেফারেন্স টানা হচ্ছে তাতে কিছু মানুষ বড় গ্যাঞ্জামে পড়ে গেছেন

২. থাক, এইটা কমু না। কইয়া হুদাই ছ্যাচা খাই আর কি!

No comments:

Post a Comment

To comment in Bangla, please use Avro Keyboard Interface. Click here for Bangla Installation Guide.

বাংলায় লিখতে অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করুন. বাংলা ইন্সটলেশন গাইড পাবেন এখানে