Wednesday, December 19, 2007

ঢাকার চিঠি - ০১

সাইন্স ল্যাব মোড়েঢাকায় পৌছেছি ১৫ তারিখ ভোরে। প্লেন মাটিতে নামার আগেই টের পেলাম হোম টার্ফে খেলা শুরু হয়ে গেছে। প্লেনে সেলফোন কেন অন করা হল এই নিয়ে দুভদ্রলোক তুমুল তর্ক জুড়ে দিয়েছেন। দু গেলাস রেড ওয়াইন আর তিনটা বিয়ার খেয়ে একটা সুখনিদ্রা দিয়েছিলাম, মহাশয়দের কল্যাণে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠতে হল।

ঢাকায় ইমিগ্রেশন পার হতে আমার "ব্যাপক" ভয় হয়। সেই ভয়ের পাছায় লাথি মেরে অফিসার ভদ্রলোক আমাকে চটপট ছেড়ে দিলেন। লাগেজ হাতিয়ে যখন বের হলাম, তখন বাবা হাত-পা ছুঁড়ে আমার চোখে পড়ার চেষ্টায় ব্যস্ত।

ঢাকার রাস্তায় তেমন পরিবর্তন নেই। অনেকদিন বড় রাস্তায় নোংরা আর ধূলো দেখিনা বলে কিঞ্চিত ধাক্কা খাওয়াটা স্বাভাবিক, কি আর করা!

এবার শুরু থেকেই আমি ভীষন অর্গানাইজড। পিডিএতে টুডু লিস্টে তোলা সব। তাতে ১ নম্বরে লেখা যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠাকরন আর ০ নম্বরে লেখা এটিএম কার্ড এর কার্যকারিতা নিশ্চিতকরন।

সকাল হতেই, মেব্যাংকের হলুদ কার্ডটা নিয়ে স্ট্যানচার্ডের এটিএম এর লাইনে দাড়ালাম। লম্বা লাইন সেখানে। সে আশায় একখাবলা বালি আর খানিকটা সুরকি ঢেলে কার্ড কাজ করলো না। যেসব কার্ডের পেছনে আর ATM মেশিনে PLUS সাইনটা থাকে তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে পারে। মুস্কিল হল স্ট্যানচার্ডের ATM চূড়ান্ত মূক-বধিরের মতো কার্ডটা উগড়ে দিল। ভাগ্যিস HSBC বেশী দূরে ছিল না, শেষ রক্ষা হল সেখানে।

রাইফেলস স্কয়ারে ৩০০ টাকায় GP এর কানেকশন নিয়ে ফেললাম। দেশ অনেক এগিয়ে গেছে, সবাই এখন মোবাইল ডেটা সার্ভিস দেয়। প্রতি কিলোবাইট ডেটা মাত্র ২ পয়সা, আমাকে আর কে পায়! বাংলাদেশের মতো জায়গায় রাস্তাঘাটে নেট পাওয়াটা পরম সৌভাগ্য বলতেই হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে এই সুযোগকে ব্যবহার করে অনেক কিছু করে ফেলা সম্ভব, আমার বিশ্বাস অল্প দিনের মধ্যেই আমরা সেই সুফল পেতে শুরু করবো। আরেকটি জিনিস আসলেই উল্লেখ করার মতো, সেটা হল, রাস্তারঘাটে মোবাইল টেলিফোন সার্ভিস বিক্রি করার দোকান। এদের সম্বল একটা সেলফোন আর একটা টুল। মাত্র ৪০০০ টাকা পুঁজিতে একটা মানুষ যদি চাহিদাযুক্ত ব্যবসা শুরু করতে পারে তাহলে তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট না করাটা অন্যায় হবে!

বিকেলে আজিজে গেলাম সচল সমাবেশ দেখতে। লাল্লু অমিত (আহমেদ), সুজন অমিত, চোরা বলাই, ডেয়ারিং পিলু ভাই, অমায়িক বিপ্লবদা, ডটু রাসেল, ঝরাপাতা, মেন্টাল, অপালাদি এদের দেখে বুকটা ভরে গেল। এক বছর পর আবার একসাথে হতে পারাটা বড় আনন্দের। আমি আমার ইশকুলের বন্ধুদের সাথেও এভাবে কখনও আলিঙ্গন করা হয় না, টানটা কিভাবে যে এতো আন্তরিক হয় সেটা এক অদ্ভুত রহস্য!!!

নতুন মানুষদের মধ্যে ছিলেন লীলেন ভাই আর মুজিব মেহেদী। বস্তিবাসী লীলেন ভাই চমৎকার লোক, ভারী গলায় আদর করে করে শব্দ উচ্চারন করেন। ফর্সা দিলের এই গুনধর সচলকে গুরু মানতে হবে। মুজিব মেহেদী কথার বলার চেয়ে শোনাতে বিশ্বাসী। অমায়িক এই ভদ্রলোকের সাথে যেটুকু সময় আড্ডা দিলাম তাতে ভালোই লাগলো।

লীলেন ভাই এর ষড়যন্ত্রে আমাকে একটা লেকচার ঝাড়তে হয়েছে। কথা বলার মাঝে খেয়াল করলাম উপস্থিত অনেকের মাঝে কিঞ্চিত অসহায়ত্ব। কবিতার মাঝে ইউনিকোডের প্রসঙ্গ টানাটা কতো বিপদজনক হতে পারে এই প্যাঁচালটা পাড়তে গিয়ে জানা গেল..

সে রাতে সচল ভুড়িভোজটা খাসা হয়েছিল। কি মেনু জানতে চান? চিতল মাছের কোপ্তা, মুরগীর রোস্ট, রুই মাছের পেটি, আচার, ডাল আর সাদা ভাত... সচল সমাবেশ হবে আর তাতে ভুড়িভোজ হবে না তা কি করে হয়!

গতকাল আর আজ বিকেল পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম গাড়ি ঠিক করতে । বিকেলে পিলু ভাই হাজির, গেলাম আজিজে। রাসেল ভাই ছিলেন সেখানে। দুজনে সচলের টি-শার্ট পরে এসেছিলেন। খুব শখ ছিল রাসেল ভাইকে মডেল বানিয়ে কিছু ছবি তোলার। কিন্তু ওনার ছবি প্রকাশ হলে মার খাবার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে, তাই আপাতত ফোটোসেশন হল না।

..
পিলু ভাইকে বিশাল ধন্যবাদ, বছর দেড়েক পর গরুর চাপ খেলাম। দুটো চাপ আর আটটা লুচি, উমম!!
আরেকটু পরে দেখা হল কৌশিক আর শরতের সাথে। তবে নটার আগেই আড্ডা ভেঙ্গেছে আজ।

এক বছর ঢাকা কেমন লাগলো? হুমম। টিভি চ্যানেল গুলো মান বেড়েছে। ATN এখনও অখাদ্য নাটক দেখায়। পালের নতুন ভেড়া Islamic TV। ইন্ডিয়ার বিখ্যাত একটা রামছাগল জাকির নায়েক। এই রামছাগলটার ছাগলামী বাংলায় ডাব করে প্রচার করাটা দেখে আমি ব্যাপক আনন্দিত!!! ইয়েহ রাইট!!!

মোবাইল ফোনের সার্ভিসে (বিশেষত GP) সুবিধা হয়েছে অনেক। আমি সাকসেসফুলি আমার PDA ফোনে চব্বিশ ঘন্টা অনলাইন থাকতে পারছি, রাস্তাঘাটে MSN এ আলাপ, কিংবা Google Maps এ ঢাকার রাস্তা দেখা কতো কিছুই না করা যায় এখন!!!

রাস্তায় গুরু ছাগল দেখা যাচ্ছে না তেমন। শুনলাম দাম নাকি চড়তির দিকে! কালেক চেক আউট করতে হবে।

শেষ করি একটা মজার খবর দিয়ে। আমাদের সময় পত্রিকার ১৭ তারিখে বের হয়েছিল।
আমাদের সময়

No comments:

Post a Comment

To comment in Bangla, please use Avro Keyboard Interface. Click here for Bangla Installation Guide.

বাংলায় লিখতে অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করুন. বাংলা ইন্সটলেশন গাইড পাবেন এখানে