Monday, January 19, 2009

ফ্রেজার হিলে আরেকবার

উইকএন্ডটার জন্য আমরা দু'জনাই অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম।
"ফ্রেজার হিলে যাই চলো শনিবার, দিনে গিয়ে দিনেই ফেরা যাবে", মাশীদকে বলি। কি ভেবে সেও রাজী হয়ে যায়।

ফ্রেজার হিলে আগে গিয়েছিলাম একবার, পাখি দেখতে। রাস্তা দুর্গম আর বিনোদনের অভাব বলে সহজে ওদিকে কেউ যায় না। আগেরবার যেখানে ছিলাম সে হোটেলের ভাড়াও কম। তাই চট করে ঘুরে আসার জন্য জায়গাটা মন্দ না যদি পাখপাখালি আর পাহাড় নিয়ে আপনার আগ্রহ থাকে।

শখ ছিল ছবি তুলব, পাখির ছবি তুলতে হলে আবার শুরু করতে হয় আলো ফোটার আগেই। সে হিসাবে ভোর পাঁচটায় রওনা দেবার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত রওনা দিলাম সাড়ে আটটায়, আর পাহাড়ের মাথায় পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে বারোটা।

সাড়ে বারোটায় পাখির দেখা পাওয়াটা খানিকটা র‌্যান্ডম ঘটনা হয়ে পড়ে। তাই এ পাহাড়ের মাথা-সেমাথা ঘুরে ঘুরে সময় কাটলো।

গতবার ছিলাম জেলাই হাইল্যান্ড রিজর্টে। বিশাল হোটেল, অবস্থা করুন। গেস্ট বলতে আমরাই। মাশীদের আব্দার স্মোক হাউজে থাকবে। আমি মানতে নারাজ, গেলবার হোটেলের বারান্দায় অনেকরকম পাখি ছিল, সেই সুযোগ ছাড়তে আমি রাজী নই।

ফ্রেজার হিলে ওঠার জন্য শেষ সাত কিলোমিটারকে বলে দ্য গ্যাপ। লাটসাহেবেরা এই রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন, তারপর আর কোন বদল নেই। গ্যাপ হল এক লেনের রাস্তা। বিজোড় ঘন্টায় গাড়ি উপরে ওঠে আর জোড় ঘন্টায় নীচে নামে। গ্যাপ এতোটাই বাঁকাচোরা যে স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে হাত ব্যথা হয়ে যায়। রাস্তা কতো বাঁকা সেটা জিপিএস-এর ম্যাপে দেখলে বোঝা যেতে পারে।
জিপিএস এর ম্যাপে ফ্রেজার হিলে যাবার বক্র রাস্তা (দ্যা গ্যাপ)

ফ্রেজার হিলে গল্ফ ক্লাব আছে, বাংলো আছে। কিন্তু বার কিংবা রেস্তোরা নেই। নেই দোকানপাট কিংবা নাইটক্লাব। থাকার মধ্যে আছে একটা ফুডকোর্ট, রাতে খেতে গেলাম সেখানেই। এখানে খাবার বেশ সস্তা। গরম ভাতের সাথে ঝাল-মিষ্টি গোশ আর কফি - এই খেতে দুজনের পড়ল ষোল রিঙ্গিত। বাইরে ভালোই লাগছিল ঠান্ডার মধ্যে। কিন্তু শীতের কাপড় আনতে ভুলে যাবার জন্য বেশীক্ষন থাকাটা বিপজ্জনক হয়ে গেল, বাধ্য হয়েই রুমে ফিরতে হল। এবার পরিকল্পনা ভোর ছটায় উঠবার। ছটায় উঠলাম ঠিকই, কিন্তু মাশীদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না বলে, ভাবলাম আরেকটু থাকি। দেখি সেই আমাকে বলে "ছবি তুলবে না?"

জ্যাকেটটা গায়ে চাপিয়ে লাগোয়া বারান্দায় একটা উকি মারতে গেলাম বিশাল হাই তুলে। গিয়ে আমি হতবাক! নীচে চারপাঁচটা মিলিটারীর লোক দাড়িয়ে! এতো মহাযন্ত্রনা!

চোখ কচলে আবার দেখি! বন্দুক তো দেখা গেলনা... বেশী দেরী হল না বুঝতে, এরাও এসেছে পাখির ছবি তুলতে, পাখি যেন ভয় না পায় তাই মিলিটারী ক্যামোফ্লাজ ড্রেসে সেজেছেন তারা। প্রত্যেকেরই ৬০০ মিলিমিটারের লেন্স (দাম বাংলা টাকায় আড়াই/তিন লাখের মতো হবার কথা)। বোঝাই যাচ্ছে এনারা প্রোফেশনাল, দামী ক্যামেরার সাথে দামী ফোর হুইলারও আছে। মাশীদকে ডেকে দেখাই।
ফ্রেজার হিলের পেশাদার বার্ড ফোটোগ্রাফারের দল

ভদ্রলোকদের দেখে আমাদের উৎসাহে ঘি পড়ল। মুশকিল হল মেঘ। ঘন মেঘে পাহাড় ঢাকা, এতে ছবি তোলা কঠিন, তা দুনিয়ার সেরা ক্যামেরা থাকুক আর না থাকুক।

গেলবার লাফিং থ্রাশের ছবি ভালো তুলতে পারিনি, এইবার এক্কেবারে সমানে বসে তারা ডাকাডাকি করেছেন। গানের গলাও ভালো। আগের ক্যামেরাটা থাকলে ভিডিও করে রাখা যেত।
চেস্টনাট ক্রেস্টেড লাফিং থ্রাশ

আমাদের কপাল ভালো। পাখির দল জংলী ভাইজানদের বাদ দিয়ে আমাদের দিকে জটলা শুরু করলো। মেশিনগানের মতো ফোর্টিডি চালিয়ে আমরা দৌড় দিলাম হোটেলের দোতলায়। সেখানকার ফুল গাছে স্পাইডারহান্টার ঘুরে বেড়ায়। অনেক কায়দা করে তাকেও ধরা গেল
স্ট্রিক্ড্ স্পাইডারহান্টার

দশটার দিকে মনে হলে নাস্তা করাটা জরুরী। নীচে নেমে দেখি জংলীগ্রুপ গায়েব। তাদের ছিটানো রুটির টুকরো খেতে নেমেছে একদল লম্বাল্যাজা সিবিয়া। সিবিয়া দেখতে সুশ্রী নয়, কিন্তু তা গানের গলায় পুষিয়ে নিয়েছে ভালোই
লং টেইল্ড সিবিয়া

সেই আগের জায়গায় গেলাম নাস্তা করতে। বিফ রেন্দাঙ দিয়ে নাসি লেমাক। তারপর একমগ গরম তে-তারিক! ইতোমধ্যে আমরা খেয়াল করলাম জংলী গ্রুপও একই জায়গায় খেতে এসেছে। বেচারাদের কপাল ভালো না। এতো লটবহর এনেও সুবিধা করতে পারলো না।

নাস্তা শেষে আবার হোটেলে পাখি শিকার শুরু হল। আমার চেয়ে মাশীদের আগ্রহ অনেক বেশী। তাকে টেনে সরানো যায় না। বুকে ১০x জুম ওয়ালা ক্যামেরা কিনে দেবার এই বিপদ!

বারোটায় চেক আউট করে গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম টেলিকম লুপে। গেলবার হেঁটে হেঁটে পুরোটা ঘুরেছি, এইবার চালাকি করে গাড়ি এনেছি। টেলিকম লুপ হল জংলা জায়গা, তাই পাখি দেখা যাবার কথা বেশী। তবে ছবি তোলবার জন্য যে ভালো না সেটা বুঝতে আমাদের বেশী দেরী হল। টেলিকম লুপে ঘুরতে গিয়েই দেখা পেলাম রূপালী কানের মেসিয়ার। এই মেসিয়া পাখি নাকি ফ্রেজার হিলের আনঅফিসিয়াল মাস্কট।
সিলভার ইয়ার্ড মেসিয়া

ফেরার পথে গলফ গ্রীনের কাছে গাড়ি থামলো। এই খানটায় প্রচুর সোয়ালো পাখি ওড়ে। প্র্যাকটিক্যাল ফোটোগ্রাফি ম্যাগাজিন মতে পাখির ছবি তোলার ডিফিকাল্টি লেভেল আছে ১৪টা। বালিহাঁসের ছবি পড়ে ১০এ, আর সোয়ালো একদম ১৪তে। কঠিনরকম দক্ষতা না থাকলে এ পাখির ছবি তোলার চেষ্টা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

আমি যখন হাঁপিয়ে উঠলাম তখনও দেখি আমার ভদ্রমহিলা ছুটে বেড়াচ্ছেন। এক পর্যায়ে ফোন! তার ব্যাটারী খতম। অগত্যা ফ্ল্যাশ থেকে দুটো খুলে দিলাম। বুদ্ধিমানেরা সাথে এক্সট্রা ব্যাটারী, এক্সট্রা মেমোরী কার্ড, চার্জার রেখে দেয়। আমরা সাফল্যের সাথে নিজেদের বোকা প্রমাণ করেছি। বেশী বুদ্ধিমান হবার সাথে পয়সা খরচেরও একটা ব্যাপার থাকে কিনা..

যাই হোক, বহু লাফঝাঁপের পর বেলা দুটোয় বাড়ির পথে রওনা দিলাম। চীনে নববর্ষের ছুটিতে আবার আসা যাবে চোখ টিপি

চেস্টনাট ক্রাউন্ড ওয়ার্বলার

দোয়েল

চেস্টনাট ক্রাউন্ড লাফিং থ্রাশ

ফ্লাইক্যাচার না রবিন?

চেস্টনাট ক্যাপড্ লাফিং থ্রাশ

স্পাইডারহান্টার

বিল্লী

ফুল

মাশীদের ছবিতোলা

ফ্লাইক্যাচার

জংলী ফার্ন এর ডগা

গাছের উপর শিশু ফার্ন

নাম-না-জানা ফুল


Tuesday, January 6, 2009

এলোমেলো কথা - ০৬.০১.০৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি পাখি

১.

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি পাখির গল্প শুনেছি বহুদিন ধরে। ঢাকায় এসে প্রথমেই ভেবেছি ঢুঁ মারবো ঐদিকে। সচলাড্ডায় ফারুক ওয়াসিফ এর সাথে দেখা। ভদ্রলোকের জন্য "জিনিস" আনার একটা ঘোষনা দিয়েছিলাম মধ্যযুগে। আমি ভুলে গেছি, তিনি

ভোলেন নাই। কিছুক্ষন তার ধূসর রসবোধ নিয়ে মস্করা করার পর পাখির প্রসঙ্গটা তুললাম। কামেল মানুষ, দুই মিনিটের মধ্যে ফোন্দিয়া নিশ্চিত করলেন "পাখি এসেছে!"

পাখি এসেছে, খুবই আনন্দের কথা। কিন্তু কেমনে যাব? কার সাথে যাব? নানাসূত্রে এই খবর কানে গেল আমাদের পাইলটের। দেখা গেল উৎসাহের হিসাবে সে আরো দুই কাঠি উপরে। সে-ই খানিকটা ধাক্কা দিয়ে নিয়ে গেল কাল, জাহাঙ্গীরনগরে...

জাহাঙ্গীরনগরের মতো সুন্দর ক্যাম্পাস কম

আছে। সময় থাকলে হয়তো ক্যাম্পাসেরই ছবি তুলতাম। যেহেতু ভরদুপুরে (দেড়টা) গেছি তাই পাখিই প্রায়োরিটি। পোস্টঅফিসের সামনে যে জলাটা আছে সেখানে গিয়েই বোঝা গেল জায়গামতো চলে এসেছি। কিচির-মিচির! কিচির-মিচির!

মহাজ্ঞানীরা বলেছেন ৪০০মিলিমিটারের নীচে টেলিফোটো নিয়ে পাখির ছবি তোলা ঠিক্না। গরীবের ভরসা ৭০-৩০০, তাই খুব "জুইত" করা গেল না ছবি তুলে। মু

স্তাফিজ ভাইকে শাপশাপান্ত করতে থাকি মনে মনে, এই লোক ৪০০মিলিমিটার DO লেন্স কেনার ধান্দায় আছে। নিষ্ঠুর!!

পুরো জলাশয় জুড়ে

অসংখ্য হাঁস, এদের সম্ভবত বলা হয় হুইসলিং টীল (Whistling Teal)। ছবি তুলতে তুলতে সাদা বক, কানি বক, ডাহুকও দেখা গেল কিছু।

IMG_7290

IMG_7237

IMG_7124

IMG_7155

IMG_7250

লোকে জানালো আরেকটু ঠান্ডা পড়লে নাকি আরো পাখি আসবে। হাতে সময় নেই, না হলে আবার আসা যেত। কপাল, সব কপাল...

২.
ফেরার পথে জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর বধ্যভূমি দেখা হল। আমি স্থাপত্যকলার মানুষ না, গুনবিচার করা কাজ না আমার। তারপরও এই দুটো কীর্তি দেখে আমি অবাক হয়ে রই। এই দুই এর স্থপতিযুগলে পদধূলি নিতে পারলে ভালো হতো..


IMG_7653
কি লাভ সৌধ গড়ে যদি মূল্য না দেই?

৩.
অজানা এক তেলেসমাতিতে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০টাকা কমে গেছে। কালকে বাবা জানালেন ভোজ্য তেলের দামও নেমে গেছে শ খানেক টাকা। মহাজোট কি খেল দেখানো শুরু করলোরে বাবা!

৪.
কালকে গেছিলাম ধানমন্ডি ২৭ এর "বারবিকিউ টুনাইট" এ। রুমালী রুটি সহযোগে চিকেন টিক্কা আর খাটাখাট খেলাম বহুদিন পর। আহা! কুয়ালালুমপুরে যদি একটা ব্রাঞ্চ খুলতো...
....
অ্যাজ অফ সকাল আটটা, ডজনখানেকবার টয়লেটে গেছি। বাংলাদেশ আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল আমি আর তার ছেলে নই মন খারাপ

Sunday, January 4, 2009

ফোটোওয়াকে..

ফ্লিকারে বেশ কটা বাংলাদেশী গ্রুপ আছে। মুস্তাফিজ ভাই এর সূত্রে বিপি-র (বাংলাদেশী ফোটোগ্রাফার্স) সাথে চিন-পরিচয় হয়েছে। মুস্তাফিজ ভাই এর বাড়িতে ডিনারের দিন কর্তাদের সাথে হালকা গফসপ হল, ছবির হাটের মিটিং এ বাকিদের সাথেও আলাপ করার একটা মওকা মিলল। গিয়ে দেখি সব বাচ্চাছেলে (ইয়ে মানে.. আমার চেয়ে বুড়া মানুষ বেশী নাই )। তো এই বাচ্চাছেলেগুলো আবার ছবি তোলে অসাধারন, একেকটার ছবি দেখলে মনে হয় ক্যামেরা বেচে দিয়ে নেঙটি পড়ে ভিক্ষা করি। এরা ছবি তুলতে প্রায়ই দল বেঁধে ফোটোওয়াকে বের হয়। ফোটোওয়াকের গল্প শুনতে শুনতে আমারও লোভ হচ্ছিল বের হতে। আমার কপাল সেদিন ভালো ছিল, মনির (Flickr ID: Catch the Dream) ঘোষনা দিল নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনে তারা যাবে মানিকগঞ্জে, ফোটোওয়াকে। আমাকে আর পায় কে!

ফ্লিকারে যখন ঘোষনা এল তখন আমি কিঞ্চিৎ চিন্তিত, সকাল আটটায় যেতে হবে ফুলবাড়িয়া BRTC বাস স্ট্যান্ডে। ঢাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বিকার ৪টায়, তার উপরে ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ডে জিন্দেগীতে যাইনি। কি যন্ত্রনা!

দুই তারিখ ঘুম ভাঙলো ঠিক সময়ে, কিন্তু জায়গামতো হাজির হতে হতে সাড়ে আটটা বেজে গেল। মুখচেনা সব গুণধরেরা হাজির। জনপ্রতি চান্দা দুশ টাকা, সেই টাকায় খানাদানা আউর যানাবাহানা। নাস্তা অনেকেই করেনি, তাই মামুর দোকানে সবাই বসে গেল ভাজি পরোটা খেতে। শীতের সকালে ভাজি-পরোটা আর চা! আহা!!..

আমি জানতাম জনগন সিংগাইর যাবে, বাড়িতে সেইরকমই বলা। তিন ঘন্টা বাসযাত্রার পর জানা গেল আমরা যেখানে হাজির সে জায়গার নাম পাটুরিয়া। পাটুরিয়ার নাম এই জীবনে শুনিনি, ছবি তোলা গেলেই হয়।

যাইহোক, ফোটোওয়াকের মধ্যে কেমন একটা পিকনিক পিকনিক ভাব আছে। সবাই যন্ত্রপাতি বের করে শিশুর মতো উদ্দীপনা নিয়ে ছুটতে লাগলো বালুচরে। শরীফ ভাই কাজ করেন নিয়েলসন কাম্পানীতে, শখে ছবি তোলেন। দলে তিনিই সবচে' বড় (ভদ্রলোক কেমন ছবি তোলেন সেটা জানতে চাইলে ফ্লিকারে Ideas are Bulletproof নামের লোকটিকে খুঁজে বের করুন) । অনেকক্ষন ধরে খেয়াল করছিলাম ভদ্রলোক টিফিনব্যাগ নিয়ে ঘুরছেন। চরে নেমে তিনি সেই ব্যাগ থেকে বের করলেন সিগমা-র ৫০০মিলিমিটার টেলিফোটো লেন্স। আমি মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। টেলিফোটোর দাম দেখে আমি ওই রাস্তা ছেড়ে দিয়েছি। অগ্রজকে "ছিল" দিয়ে একটা ক্যাননের 35mm f/1.4 L লেন্স বাগিয়ে ফেলেছি। সেটা হাতে পেয়েছি কদিন হল। আজকে আমার হাতিয়ার হবে এই বস্তু।

চরে গিয়েই মনে হল জানা দরকার নদীটার নাম কি। ছড়াকার টিপু কিবরিয়া গম্ভীর মুখে বললেন পদ্মা। আমার সাথে এই লোকের তামাশা করার কথা না। তারপরও কথা মানতে পারলাম না। আসতে যে তিন ঘন্টা লেগেছে সেইটা মাথায় রাখলে হয়তো বিব্রত হতে হতো না।

চরে ছবি জমলো না। সর্ষে ফুল সামান্য, পাখিও নেই তেমন (শরীফ ভাই এর অবশ্য দাবী তিনি হুপো দেখেছেন) । লোকজন কিছক্ষন এটা সেটা তুলে ঘাটের দিকে রওনা হল। হেতু মধ্যাহ্নভোজন।

ঘাটের ইলিশ মাছের বহু গল্প শুনেছি। খাবার সুযোগ ছাড়ি কিভাবে? কিন্তু ইলিশ মাছের তরকারী বলে যা দেওয়া হল তাকে কেবলই তৃতীয় বিভাগে পাশ মার্ক দেওয়া যায়, একে নিয়ে "স্টারপেয়েছি" টাইপ খাজুরে আলাপ জুড়ে দেওয়া না।

ঘাটে ভালোই ভিড় ছিল। অনেক আগে আরিচা আর নগরবাড়ী ঘাট হয়ে পাবনা যাওয়া হতো। তারপর অনেক দিন হল ঘাট মাড়ানো হয়নি। এবার এসে মজাই লাগলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই পুরো দলটা রিক্সা নিয়ে ছুট দিলো গ্রামের দিকে। আমরা হাজির হলাম যে গ্রামটায় তার নাম "নালী"। "নালী" টিপিক্যাল বাংলাদেশী গ্রাম। সর্ষে ফুলে হলুদ হয়ে আছে, লাউয়ের মাঁচায় লেজ ঝুলিয়ে বসে আছে ফিঙেপাখি। এমন দৃশ্য দেখে সবাই খানিকটা মাতাল হয়ে ওঠে। ১৫টা ছেলেবুড়ো ধাপধাপ নেমে যায় সর্ষে ক্ষেতে। এমন সময় কে যেন হাঁক দিল, "বাচ্চা দরকার, বাচ্চা"
মানে কি?
মানে পরিস্কার হতে দেরী হল না। গ্রামের বাচ্চাদের দিয়ে মডেলিং করানো হবে, তাই বাচ্চার খোঁজ। বাচ্চা পেতে বেশী দেরী হল না, জনা পাঁচেক হাজির হয়ে গেলেন নিমেষেই। বাচ্চাকাচ্চাদের পেয়ে সবাই নানা কসরতে নানা অ্যাঙ্গেলে ছবি তুলতে শুরু করলেন, আমিও বাদ থাকলাম না।

পনের জনের ষোলটা ক্যামেরা পারলে পুরো গ্রামটা চেয়েপুটে খেয়ে ফেলে। পুলাপাইন চান্সে পেয়ে মাঝে খেজুরের বাসি রসও খানিকটা খেয়ে নিল। একজন ঝাড়ি খেল পুকুরঘাটে স্নানরতার ফোটো খিঁচতে গিয়ে।

লোকে যে বলে বাংলাদেশের মানুষ খুব হসপিটেবল, সেটা খুব ভুল না। অচেনাঅজানা একদল লোক বিনানুমতিতে বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢুকে ফোটো তোলায় কারো আপত্তি দেখা গেল না, বরং চেয়ার এনে বসার সুব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হলেন গৃহকর্তা।

"নালী" গ্রামে ছবি তোলার অনেক বিষয় ছিল, কিন্তু সূর্য হেলে পড়ল পশ্চিমে। লোকজন খানিকটা বাধ্য হয়েই, ফিরতি পথে রওনা দিল।

ঢাকায় আসবার আগে বারবার মনকে বলেছি, "ঢাকা খারাপ, ঢাকা নোংরা, ঢাকায় জ্যাম, ঢাকায় নেট স্লো"। ফোটোওয়াকে গিয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এই বাউন্ডুলেগুলো মনে করিয়ে দিল, এই শহরটাকে এখন জড়িয়ে ধরে থাকার মতো কিছু বিষয় আছে। মুস্কিল হল, আর দুটো দিন পড়েই হাত নেড়ে চলে যেতে হবে।

আমার একদম ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না... একদম না...

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

This is why they call it a "photowalk"

Buddies

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

BP Photowalk to Saturia

?

Shopkeeper

BP Photowalk to Saturia

Neaz in Action