Sunday, March 23, 2008

পিনাং দ্বীপে আরেকবার

প্রফেট'স বার্থডে-র জন্য বৃহস্পতিবার বন্ধ, শুক্রবার ছুটি নিলে উইকএন্ডটা ভালোই লম্বা হয়। ছুটির জন্য অ্যাপ্লাই করতেই বস রাজী হয়ে গেল। ভাবলাম রেদাং দ্বীপে যাবো, রেদাং আর পেরহেন্থিয়ান দ্বীপে না গেলে জীবন বৃথা টাইপের ডায়ালগ শুনতে হয় মালেশিয়াতে। ওয়েবসাইট দেখে ফোন করে জানা গেল এদের কোনটাতেই হোটেল খালি নেই। তিওমান দ্বীপটাও ভালো ছিল। শেষ ভরসায় সেখানে ফোন করলাম। নেই, একদম খালি নেই!

মুখ কালো করে বসে আছি, হঠাৎ মনে হল পেনাং দ্বীপে গেলে কেমন হয়? আগে একবার গেছি। আহামরি কিছু না, সোনালী সৈকত ছাড়া দেখার বেশীকিছু দেখার নেই। কিন্তু পেনাং থেকে পায়ার দ্বীপের ফেরি ছাড়ে। পায়ার দ্বীপ (পুলাও পায়ার) হল প্রবাল দ্বীপ, ফটিক স্বচ্ছ পানি আর হরেকরকম মাছের জন্য একে ধান্দাবাজী করে মেরিন পার্ক বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এই মেরিন পার্কে স্নোরক্লিং করার আনন্দ অতুলনীয় হবার কথা। পেনাং-এ হোটেল পেলে চামে পায়ার দ্বীপ ঘুরে আসা যাবে। সাথে সাথে ফোন করলাম, সমস্যা হবে না জানালেন ভদ্রমহিলা। আমাকে আর পায় কে! বৃহস্পতিবার দুপুরে রওনা হলাম আমি আর মাশীদ। পেনাং (মালেতে বলে পুলাও পিনাং) এর আগেও গেছি, বাসে। এবার নিজের গাড়িতে। ছোট্ট এই দ্বীপটা মালেশিয়ার মাথার কাছে অবস্থিত। পিনাং মানে সুপারী গাছ, পুলাও পিনাং মানে সুপারী গাছের দ্বীপ। প্রাচীনকালে পেনাং ছিল কেদাহ-র অংশ। ১৭৮৬ সালে বার্মিজ আর থাইদের কাছ থেকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ইস্ট ইনডিয়া কাম্পানীর কাছে দ্বীপটি ধার দেন কেদাহ-র সুলতান। পরে দেখা গেল সব ক্যাপ্টেন ফ্রান্সিস লাইটের ধাপ্পা। সুলতান দ্বীপের দখল ফেরত চাইলেন, বিগড়ে গেল কাম্পানী! শেষে রফা হল ইস্ট ইন্ডিয়া কাম্পানী বছরে ১০ হাজার মুদ্রা ভাড়া দেবে সুলতানকে। এর ধারাবাহিকতায় আজও কেদাহ-র সুলতানকে ফেডারল সরকার ১০ হাজার রিঙ্গিত করে ভাড়া দেয়!!!

পেনাং আমার শ্বশুরবাড়ির মতো, মাশীদের জন্ম পেনাং এর গেলুগর শহরে। মেরিন পার্কে যাবার চেয়ে সস্তায় জুতো কেনা যাবে ভেবে তার ব্যাপক উত্তেজনা।

গাড়িতে ১২০কিলো টানলে ঘন্টা চারেকেই পৌছে যাওয়া যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পেনাং ব্রীজ নজরে পড়ল (রওনা দিয়েছিলাম দেড়টায়)। এই ব্রীজ নিয়ে মালেশিয়ানদের বিশেষ গর্ব, ১৩কিলোমিটার দীর্ঘ হওয়াতে বিশ্বের লম্বা ব্রীজের তালিকায় বেশ উপরে এর নাম (যমুনা ব্রীজের দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিমি)।

পেনাং যেমন দ্বীপ, তেমনি একটা মালেশিয়ার একটা রাজ্যও বটে। রাজধানী জর্জটাউন। আমি গাড়ি ঘুরালাম বাটু ফিরিঙ্গির দিকে। বাটু ফিরিঙ্গি হল সৈকত। আমার টুর অপারেটর থাকেন বাটু ফিরিঙ্গির ধারেপাশেই, লোকে জায়গাটাকে ডাকে তুনজুং বুঙ্গা বলে।

এইখানে ডানের লেনে থাকা যন্ত্রনা, কারন ডানের লেনে একটু পর পর ইউটার্নের গ্যাপ। বহুযন্ত্রনা করে টুর গাইডের দেখা মিলল। পুলাও পায়ার যেতে একেক জনের পড়বে ২৮০ রিঙ্গিত (প্রায় ৮৭ মার্কিন ডলার!)। শখের দাম লাখটাকা, বের হয়ে গেল ৫৬০ রিঙ্গিত! সকাল সাড়ে সাতটায় হলিডে ইন এর লবি থেকে তুলে নিয়ে যাবে। সকালে ওঠার ইচ্ছা ছিল না! কি আর করা!!!

ক্ষিদে পেয়েছিল ভীষন, মাশীদের কথায় গাড়ি হাঁকালাম গার্নি ড্রাইভের দিকে। সাগড়পারে হাজারো খাবারে দোকান নিয়ে গার্নি ড্রাইভ। পেনাং-এ পার্কিং নিয়ে বেশ গ্যাঞ্জাম হয়। ধুমধাম ফাইন করে দেয়। তাই পার্কিং লট ওয়ালা রেস্তোরায় ঢোকাই ভালো। বালি হাই এর চেহারা দেখে লোভ সামলানো গেল না। সীফুডের দোকান, জ্যান্ত মাছ সব একোরিয়ামে রাখা। দেখালেই কেটেছেঁটেরান্না করে দেবে। লবস্টার খাবার শখ ছিল, পয়সাতে কুলালো না। ওদিকে মাশীদ বান্দরের মতো লাফাচ্ছে, কারন একটা একোরিয়ামে দুটো মোরে ঈল রাখা। চাইলে সে দুটোও হয়তো রেঁধে খেতে দেবে!!


বালি হাই সী ফুড রেঁস্তোরা (ছবিঃ মাশীদ)
বালি হাই সী ফুড রেঁস্তোরা (ছবিঃ মাশীদ)


অয়স্টার ভক্ষন (ছবিঃ মাশীদ)
অয়স্টার ভক্ষন (ছবিঃ মাশীদ)

লেবুর রস দিয়ে ফ্রেশ অয়স্টার খেতে গভীর আনন্দ, তবে বাঙ্গালী কেউ সাথে থাকলে একাজটা পরিহার করাই ভালো। কি দরকার লোকজনকে বমিটমি করার যন্ত্রনায় ঠেলে দেবার!

সন্ধ্যা হতেই রওনা দিলাম সেই বাটু ফিরিঙ্গির দিকে। সব ভালো হোটেলগুলো এখানে সোনালী সৈকতের কারনে। আমরা অবশ্য গেলাম নাইট মার্কেট দেখতে। নাইট মার্কেট বসে হলিডে ইন-এর কাছে। বহু মানুষে গমগম করছিল, ঘুরে ঘুরে দেখতে ভালোই লাগে। পথে দেশী ভাই একজনের সাথে দেখা হল, স্মল ওয়ার্ল্ড!!

রাত দশটার দিকে মনে হল হোটেল ঠিক করা হয়নি। সস্তা হওয়াতে (১২০ রিঙ্গিত) ডি'ফিরিঙ্গি হোটেলে চেক-ইন করে ফেললাম। হোটেলটা চমৎকার, শুধু টয়লেটটা বড় কার্পন্যে তৈরি! লবি-তে ফ্রি ওয়াইফাই আছে, টয়লেটের দুঃখ তাতে খানিকটা ভোলাই যায়।

কিন্তু চ্যালেঞ্জ হল সকাল ৬:৩০ এ উঠে ৭:৩০ এর বাস ধরা। কপাল ভালো, ঝামেলা ছাড়াই পরদিন বাস ধরে ফেললাম।

পায়ার দ্বীপ(বামে), ডাইনে ডাইভিং প্লাটফর্ম (ছবিঃ মাশীদ)
পায়ার দ্বীপ(বামে), ডাইনে ডাইভিং প্লাটফর্ম (ছবিঃ মাশীদ)

পুলাও পায়ার লাংকাওয়ি দ্বীপের কাছে। পেনাং থেকে যেতে হয় ফেরীতে, দুঘন্টা লাগে। দুঘন্টা পরে যখন পৌছালাম তখন আমার বত্রিশ পাটি বের হয়ে গেছে। স্বচ্ছ সবুজ পানির উপরে ভাসমান প্ল্যাটফর্ম। গাইড ব্রিফিং করেই মাস্ক, লাইফভেস্ট আর ফ্লিপার দিয়ে গেল। মাস্ক পরে স্নরক্লিং করেছি আগের বার, ফ্লিপার পড়িনি। প্রথমবার ফ্লিপার বলে বিশেষ অস্বস্তি হতে লাগলো। থপ থপ আওয়াজ তুলে গেলাম পানিতে নামতে। পানির কাছে গিয়ে আর সাহস হয়না। ৬-৮ মিটার গভীর পানি। সৈকত প্রায় ১০০ মিটার দূরে। সেফটি লাইন বা নেট নেই। আর সাহস হয় না। একহাতে সিড়ি ধরে খানিক চেষ্টা করি কিন্তু ভরসা হয়না। এদিকে হাজারো মাছে ছেয়ে গেছে চারপাশ। অসাধারন!


ডাইভিং প্লাটফর্মের সিড়িতে জনগন (ছবিঃ মাশীদ)
ডাইভিং প্লাটফর্মের সিড়িতে জনগন (ছবিঃ মাশীদ)


অবজারভেশন ডেক থেকে (ছবিঃ মাশীদ)
অবজারভেশন ডেক থেকে (ছবিঃ মাশীদ)

মাছের ঝাঁক (ছবিঃ মাশীদ)
মাছের ঝাঁক (ছবিঃ মাশীদ)


ফটিকস্বচ্ছ জল (ছবিঃ মাশীদ)
ফটিকস্বচ্ছ জল (ছবিঃ মাশীদ)


প্রায় ঘন্টাখানেক ভীতুর ডিমের মতো বসে থাকলাম, পানিতে নামা হল না। প্লাটফর্মের নীচে অবজারভেশন এরিয়া আছে, মনখারাপ করে সেখানে গিয়ে এক জাপানি মেয়ের জলকেলি দেখতে লাগলাম। উপরে উঠে দেখি প্রায় সবাই দাপাদাপিতে ব্যস্ত। তিওমানে সেফটি লাইন ধরে ছিলাম হাতে, সাবাহ-তে পানি ছিল অগভীর। এখানে কোনটাই নেই! হঠাৎ ১০ বছরের একটা বাচ্চাকে দেখে রোখ চেপে গেল, দিলাম ঝাঁপ। হাত দিয়ে সাঁতরে সুবিধা করা কঠিন। ফ্লিপার দিয়ে পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে এক পর্যায়ে আবিস্কার করলাম আমি সামনে এগুচ্ছি! মিনিট পাঁচেক পর খেয়াল করলাম ডান হাতটা সুপারম্যান স্টাইলে ধরে রাখলে ডানে-বামে করাটা সহজ হয়ে যায়। ইনিশিয়াল শক কেটে গেল! মাছ দেখা বাদ দিয়ে সাঁতার কাটা শুরু করলাম। হঠাৎ খায়েশ হল সৈকত পর্যন্ত যাবার। অর্ধেক পথ যাবার পর দেখি ডান পা ব্যথায় অবশ হয়ে যাবার যোগাড়। তাহলে কি মাঝ পথে আটকে যাবো? না, শেষ পর্যন্ত তীরে পৌছালাম, কিন্তু ততক্ষনে দুপায়ে প্রচন্ত যন্ত্রনা! কোন একটা ভুল হচ্ছে! দম নিয়ে আবার শুরু করলাম, এবার সৈকত থেকে প্লাটফর্মে। পা ছোড়ার প্যাটার্ন খানিকটা বদল করলাম, খানিকটা ধীর লয়ে, এইবার আর ব্যথা নেই। সিড়িতে উঠতে গিয়ে দেখি মাশীদ।
"তোমার তো মহা বাড় বাড়সে!" চিন্তিত মুখে তেড়ে আসে সে! আমি হাসি!!! এই হাসি ব্রজেন দাসের ইংলিশ চ্যানেল জয়ের পরবর্তী হাসির চাইতে কম কিছু না।

বাচ্চা হাঙর (ছবিঃ মাশীদ)
বাচ্চা হাঙর (ছবিঃ মাশীদ)

দুপুরে বুফে ছিল, কিন্তু খেয়ে সুবিধা হল না। ক্ষুধা নিয়েই গেলাম শার্ক ফিডিং দেখতে। গাইড মাছ ছিড়ে ছিড়ে ফেলছে পানিতে, রক্তের গন্ধে অনেক মাছের সাথে হাজির হল তিনেট বাচ্চা ব্ল্যাকটিপ হাঙর আর একটা ব্যারাকুডা! একটু আগেই এই জায়গা থেকে মাত্র ২০০মিটার দূরে সাঁতরে বেড়িয়েছি। নিজেকে বীরপুরুষ ভেবে শান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করে লাভ হলনা।

শার্ক ফিডিং এর পরে প্রায় ঘন্টা খানেক স্নরক্লিং করেছি। ফাইন্ডিং নিমোর কল্যানে ক্লাউন ফিশ বা অ্যানেমোন ফিশ এখন সবাই চেনে। নানারং এর প্রবালের মাঝে ক্লাউন ফিশ দেখে মজাই লাগলো। সাথে বিকিনি পড়া উর্বশীদের কথা নাই বা বললাম!

------

তামান রামা রামার প্রজাপতি
তামান রামা রামার প্রজাপতি

পুলাও পায়ার দেখবার পর আজ গিয়েছিলাম তামান রামা রামা বা প্রজাপতি উদ্যানে। অসংখ্য প্রজাপতি আর কিছু বেমানান প্রাণী নিয়ে গড়া তামান রামা রামা। এরা প্রজাপতির চাষ করে ভালো পয়সা বানায়। ভাবছি ঢাকায় এরকম করলে কেমন হয়।


কাঠি পোকা
কাঠি পোকা

আলট্রাভায়োলেট আলোর নীচে কাঁকড়াবিছে
আলট্রাভায়োলেট আলোর নীচে কাঁকড়াবিছে

মাশীদের হাতে বসা প্রজাপতি
মাশীদের হাতে বসা প্রজাপতি

বিকেলে ফিরে এলাম জর্জ টাউনে। মাশীদের কেনাকাটা শেষ হয় না আর। শপিং শেষে ডিনার হল হাংরি ডাক-এ। পুরোনো শপ হাউজ গুলোকে রেনোভেট করে ক্লাব এরিয়া বানিয়েছে এরা। রাতের আড্ডার জন্য অসাধারন!

মালেশিয়া দেশটায় ঐতিহ্যের বড় অভাব। সেই দিক থেকে পেনাং আর মালাক্কা কিছুটা বিট্রিশ কলোনিয়াল স্মৃতি ধরে আছে। তবে যেভাবে এদিকায় নগরায়ন শুরু হয়েছে তাতে আর ৩/৪ বছরে সবকিছু সাফ করে হাইরাইজ উঠতে থাকবে সিঙ্গাপুরের মতো। লোকজন বড় আশা করে আছে নতুন সরকার এই বিষয়গুলো অনুভব করবে।
মালেশিয়ানদের জন্য আমার মাঝে মাঝে বড় করুনা হয়.. একটা জাতি কিভাবে এতোটা ঐতিহ্যহীন হতে পারে!... হইনা যতোই ক্লিনার কিংবা পেট্রোল পাম্পের ওয়ার্কার, সাড়ে তিনহাজার বছরের ইতিহাসের দেশ থেকে এসে আমরা এখনও কিছুটা গর্ব করতেই পারি

Saturday, March 22, 2008

ওব্রিগাদো সাও পাওলো - শেষ

(লেখাটা বহুদিন হল ঝুলে আছে, ব্রঙ্কিয়াল ইনফেকশনে পড়ে সব চুলোয় উঠেছিল, আজকে তাই হিসেব চুকিয়ে ফেলা যাক)

ব্রাজিল, লাতিন আমেরিকা নিয়ে আমার অনেক রকম ধারনা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ধারনাকে চারআনার পাত্তা দেয়না। পেলের দেশে গিয়ে রাস্তাঘাটে সাদাচামড়ার মানুষ দেখতে বেমানান লাগছিল। ইতিহাস পড়ে জানলাম আদিবাসী বা মাটির মানুষ যারা ছিল তাদের পর্তুগীজ শাসকেরা মেরে কেটে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছেন! প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল ওয়াইমিরা বলে একটা আদিবাসী গোত্র। ব্রাজিলের জেনারেলরা তখন আমাজনের মাঝ বরাবর রাস্তা বানাতে ব্যস্ত। আদিবাসী গোত্রের ঝামেলা তাদের বিরক্ত করল, মশামাছি মারার মতো তাই একরাতে হাজার দুয়েক মানুষকে মেরে এরা রাস্তা তৈরির পথে আর কোন বাঁধা অবশিষ্ট রাখলেন না।

যাই হোক, মূল গল্পে ফিরি। শনিবার সকালে ক্রিসের সাথে রওনা দিলাম MASP বা Museu de Arte de Sao Paulo এর দিকে। এই মিউজিয়ামকে নিয়ে আমার ব্যপক আগ্রহ। এই প্রথম সামনাসামনি বড় শিল্পীদের ছবি দেখার সুযোগ হবে। ছবি সামনাসামনি দেখলে আদৌ বেশী কিছু দেখা যায় কিনা আমার জানা নেই, তারপরেও দাপাদাপি উত্তেজনা।

IMG_0608
সাও পাওলো আর্ট মিউজিয়াম

১৯৪৭ এর তৈরি এই মিউজিয়ামটা অ্যাভেনিউ পলিস্তার একপাশে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝবার জো নেই! দুটো লেভেল, লেভেল টুতে স্থায়ী প্রদর্শনী, আর লেভেল ওয়ানে সাময়িক প্রদর্শনী। লিফ্ট নিয়ে গেল লেভেল টুতে। লিফ্টে থেকে নেমে প্রথমেই অবাক হবার পালা, দালির একটা স্কেচ, ক্যাভালিয়ের। এলোমেলো দ্বিধাহীন কিছু রেখায় আঁকা সেই ঘোড়সওয়ার, ভদ্রলোকের বিখ্যাত কোন ছবি নয়, আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি সেই বলিষ্ঠ রেখাগুলো..

এই জীবনে আর্ট মিউজিয়াম দেখিনি আগে, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যাবার শখ থাকলেও কাজের চাপে আর যাওয়া হয়নি। সাও পাওলো মিউজিয়াম চট করে ভালো লেগে গেল একটা কারনে, ছবি গুলো সময় ও স্টাইল অনুযায়ী আলাদা করে রাখা, সাথে নোট। নোট পড়ে নিলে চিত্রকলার জগৎ ও দর্শন কিভাবে পরিবর্তিত/বিবর্তিত হয় সেই বিষয়টা পরিস্কার হয়, ফলে ছবি উপভোগ করাটা অনেক সহজ হয়।

উদাহরন দেওয়া যাক, একদম শুরুতে ছবির মানুষরা সটান শক্তপোক্ত দাড়িয়ে থাকতেন। ক্রমেই এতে পারস্পেকটিভ যুক্ত হল, সটান শক্ত মানুষগুলো আরেকটু সহজ হয়ে বেঁকে বা হেলে দুলে পোজ দিতে শুরু করলেন। ছবির সাথে যখন এরকম চমৎকার বিশ্লেষন থাকে তখন ছবি দেখা অনেক উপভোগ্য হয়ে ওঠে, নিঃসন্দেহে!


অনেক বিখ্যাত শিল্পীর ছবি ছিল যাদুঘরে, এদের মধ্যে পিকাসো, ভানগোহ, রাফায়েল, রেমব্রান্ড, রেনোয়া, মনে, মানে, সেজান, দেলাক্রোয়া উল্লেখযোগ্য। তবে এটাও বলতে হবে যে, যাদুঘরের কীর্তিগুলো সেরা শিল্পীদের সেরা কর্ম নয়। দুজন শিল্পীর ছবি একটু আলাদা করে টেনেছে, প্রথম জন হলে সান্দ্রো বত্তিচেল্লী। বত্তিচেল্লীর নারীদের নিয়ে কবিতা পর্যন্ত লেখা হয়েছে। বার্থ অফ ভিনাস বহুদিন ওয়ালপেপার ছিল আমার কম্পিউটারে। বত্তিচেল্লীর কন্যাদের সামনা সামনি দেখার সুযোগ কি হারানো চলে?


ছবিটার নাম শিশুসন্ত জন বাপ্টিস্টের সাথে কুমারী মেরি।

দ্বিতীয় ছবিটা দেখলে আমার ধারনা আরো অনেক সচল একটু হলেও পুলকিত হতেন, শিল্পীর নাম জাকাপো তিনতোরেত্তো, মৃত্যূপথযাত্রী যিশুর ছবি। মনে পড়ে সত্যজিতের "টিনটোরেটোর যিশু"? এই সেই শিল্পী..

যাই হোক, আরেকটা ছবির গল্প না বললে মিউজিয়াম কাহিনী অসম্পূর্ন থেকে যায়। ছবিটা পিকাসোর, নাম Portrait of Suzanne Bloch, ১৯০৪ এ আঁকা। পিকাসোর "ব্লু পিরিয়ড" এর অন্যতম কীর্তি।

২০০৭ এর ২০শে ডিসেম্বর আরেকটি ছবির সাথে এই ছবিটাও চুরি যায়। চোরেরা মাত্র তিন মিনিট সময় নেন চুরি করতে। মাস খানেক পর এই ছবিটি আবার উদ্ধার করা হয়। ছবিটার দাম খুব বেশী ছিল না, মাত্র ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার...


ঘরের কোনায় দাড়িয়ে যখন রঁদ্যার একটা ভাস্কর্য দেখছি, তখন ইয়ের ভাই ক্রিস এসে হাজির। শালার চীনেটা বহুক্ষন ধরে ঘ্যানঘ্যান করছে, আর্ট মিউজিয়াম তোর সয় না, তো আসিস ক্যান সাথে? বললাম লেভেল ওয়ান দেখে নীচে নামবো। ব্যাটা বিরস বদনে নীচে গেল। লেভেল ওয়ানে নতুন চীনে শিল্পীদের এক্সিবিশন চলছিল। চট করে দেখে নামলাম ছাগলটার খোঁজ নিতে। ছাগলের শখ হয়েছে ব্রাজিলিয়ান ম্যাক খাবে, তার ধারনা ব্রাজিলের মাংসের ম্যাকের স্বাদ আলাদা। কি যন্ত্রনা! শেষে টেনে নিয়ে গেলাম আগের দিনের রেস্তরায়।

খেয়েদেয়ে ক্রিসকে বলি, কই যাবে হে?
ইবিরাপুয়েরা পার্ক, সে বলে। পার্ক প্রায় দু মাইল দুরে, শালা হেটে হেটে যাবার ধান্দা করছে। বললাম ট্যাক্সি নিতে। সে মানবে না। মহা যন্ত্রনা, ভরদুপুরে ভরাপেটে এই বান্দরের সাথে আমি হাটতে রাজী না। "আমি তাহলে জু-তে যাই, তুমি পার্কে যাও গে", আমি বলে ফেলি
বদমাশটা ছোট চোখ আরো ছোট করে তাকায়। তারপর ওকে বলে হাটা দেয়। ট্যাক্সি নেব নিচ্ছি করছি, এমন সময় ক্রিসের দেখা আবার।
"কি চাস বাবা?"
"আমি রাস্তায় জিজ্ঞেস করলাম জু-তে যেতে কতোক্ষন লাগে, বলল ৪০ মিনিট তাই ব্যাক করলাম, আমার ধারনা ছিল জু-তে যেতে ২০০/৩০০ রিয়াইস লাগবে"
"চল চান্দু চল", দাঁত কিড়মিড় করে বলি আমি।

সাও পাওলো জু বিশাল, ট্র্যাভেল গাইডেও সুনাম করা। কিন্তু কিছুক্ষন ঘোরাঘুরির পর আমরা কিছুটা বিরক্ত হয়েগেলাম। আমাজনের পশুপাখি দেখার জন্যই আসা, সেখানে সাইবেরিয়ান টাইগার আর হাতি দেখলে ভালো লাগে না। ধারনা ছিল ভালো অ্যাভিয়ারি থাকবে, তাও নেই।
বিকেল ৫টার দিকে কিঞ্চিত বিরক্তি নিয়ে ফিরে এলাম আমরা দুজন।

An Eye to die for
টাউকান পাখি

The Cat from Amazonia
জাগুয়ার

IMG_0650
চিড়িয়াখানার খেলনাওয়ালা


আসার পথে রাস্তা দেখতে দেখতে আসি। সিগনালে গাড়ি থামে, এগিয়ে আসে ভিখারী কিশোর। দেখি ঠেলাগাড়ি ওয়ালা, আইল্যান্ডের উপরে বস্তি, তাতে হামাগুড়ি খাওয়া শিশু। সীমানা বদল হয়, ভাষা বদল হয়, দারিদ্রের চেহারা সেই একই থাকে। মুর্শেদের চিকিতা বিষয়ক কৌতুহলে ক্যামেরা বাগিয়ে থাকি। কিটিস কিটিস করে শাটার পরে, নারীমুখের ভান্ডার তৈরি হয় এসডি কার্ডে। ফিরে এসে যখন সেই ছবি দেখি তাতে মোহনীয় জেল্লার চেয়ে রোদেপোড়া পরিশ্রমী কিছু মুখ ভেসে আসে, মুর্শেদের চিকিতাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

রোববার কি করা যায়? দেখা গেল সাধ্যের মধ্যে করার তেমন কিছু নেই এক সমুদ্র সৈকত দেখা ছাড়া। সকালে উঠে মুড়িওয়ালার আসার বসে রইলাম। ব্যাটা শেষ মুহুর্তে বলে সে যাবে না, বুঝলাম অনেক দিন পর আয়েস করে ঘুমাবার সুযোগ সে ছাড়তে চায় না। কনসিয়ার্জকে জিজ্ঞেস করলাম সৈকত দেখার তরিকা। সে ম্যাপট্যাপ এঁকে দিয়ে সব বুঝিয়ে দিল। মেট্রো ধরে আমার গেলাম সাও পাওলো শেষ প্রান্তে জাবাকুয়ারা স্টেশনে। সেখান থেকে বাসে ৮৫ কিলো যাবার পর পৌছালাম গুয়ারুজা শহরে। তারপর ট্যাক্সি নিয়ে এনসিয়েদা সৈকতে। এনসিয়েদা জনপ্রিয় সৈকত, প্রচুর ঢেউ, কিন্তু পানি স্বচ্ছ না। না, এখানে টপলেস সুন্দরী ছিল না। ব্রাজিলের খুব সীমিত সৈকতে টপলেস সুন্দরীদের দেখা যাবে, তার সবই রিও-তে। তাই যারা ভাবছিলেন অরূপ কঠিন দাও মেরেছে, তাদের আশার গুড়ে বালি।

এনসিয়েদা সৈকত খুব সুন্দর না হলেও এর আকর্ষন প্রাণ চাঞ্চল্যে। সৈকত ভর্তি এতো মানুষ দেখলে কেমন মেলা মেলা ভাব চলে আসে।
সাধারন কাপড়েই সৈকত ধরে হাটতে থাকি, হাতে কায়দা করে ক্যামেরা ধরা যেন অলক্ষ্যে শাটার টেপা যায়।

এমন সময় একটা 'সাদা' শিশু দৌড়ে আসে, পর্তুগীজে কি যেন বলে হাসি মুখে। প্রথম খানিকটা ভয় পাই! ফকির নাকি? মাথা ঝাকাই, তোদের ভাষা পারি না রে পিচ্চি। একটু পরে একঝাঁক বাচ্চা মেয়ে এসে ঘিরে ধরে। খিলখিল করে কি যেন বলে। আমি লাজুক হাসি দিয়ে আগে বাড়ি। কিছুদূর যেতেই আবার সেই বালক.. এবার মনযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি, আই ভিনসেন্জো। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করে, হোয়াট ইজ "মাই" নেম? একটু আগে সম্ভবত সে শিখে এসেছে কারো কাছ থেকে। "ইওর" এর জায়গায় "মাই" বসিয়ে ফেলেছে ভুল করে।
আমি হ্যান্ডশেক করে নাম বলি। ছেলেটা বিপুল আনন্দে খুশি হয়ে ফিরে যায়।

ধীরে ধীরে বিষয়টা পরিস্কার হয়। মুড়িওয়ালা বলেছিল ব্রাজিলে ইন্ডিয়ান (বাংলাদেশও এতে পড়ে কিনা) চেহারার মানুষের আলাদা কদর। আমরা যেমন সাদা চামড়া দেখে টাসকি খাই এরা ভারতীয় উপমহাদেশের শুনলে আরো টাসকি খায়। কি অবিশ্বাস্য!!!! দুনিয়ায় তাহলে একটা দেশ আছে যেখানে আমার চামড়া কোন সমস্যা না??

আবেগ তাড়িয়ে আবার মন দেই, মুর্শেদের চিকিতা খোঁজায়। ইশপের শিক্ষা, চিকিতারা শুধু টেলিভিশনেই থাকে, বাস্তবে না

কিছু ছবি দেই। মন ভরে দেখে নেন যা দেখার
For Adults n' For Kids
যে যেটায় খুশি

Garota Guaruja
গুয়ারুজার মেয়ে


গুয়ারুজার মেয়ে


ভালোবাসা ভারী!

Guys n' Girls
আরাম!

Fun in the Sun
ফান ইন দ্য সান

Garota Guaruja
গুয়ারুজার মেয়ে

Fun in the Sun
খেলা

IMG_0893
খেলা

IMG_0894
খেলা



যুগল

IMG_0880
ঘুড়ি উড়ানো


মারমেইড বানাতে ব্যস্ত যুবকের দল

IMG_0869
সৈকতে খেলা


Siesta on the Beach
সৈকতে সিয়েস্তা!

Swing in the Sea
দোল দোল হুস!

Businesss on the Beach
হকার

Nights of Guaruja
গুয়ারুজার ঠোলা

Serpentine Roads
সর্পিল রাস্তা


উল্টো সাইনবোর্ডের রাস্তা, এই রাস্তায় সব সাইনবোর্ড উল্টো!

IMG_0798
ফাভেলা (নোংরা শহর)

IMG_0788
জাবাকুয়ারা বাস স্টেশন

-------------------------------

ফেরার পথে রাস্তায় প্রচুর ফাভেলা দেখলাম। ফাভেলা অনেকটা বস্তির মতো, ঢাকায় যেভাবে চুরি করে বিদ্যূৎ নেয়, ফাভেলাতেও তেমন করে। কি অদ্ভুত! এতো বিশাল দেশেও মানুষের আশ্রয়ের সমস্যা!

দেখতে দেখতে ফেরার দিন চলে এলো। তিন তারিখ রাত একটায় ফ্লাইট, মুড়িওয়ালা এলো এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। মন খানিকটা খারাপই। মুড়িওয়ালার সাথে একটা আলাদা সম্পর্ক। বেচারার বাড়িতে যাওয়া হল না, শখ ছিল রেঁধে খাওয়াবো। কাজের চাপে আর হয়নি। মুড়িওয়ালায় খুব আশায় আছে আমাদের প্রজেক্টে ঢোকা নিয়ে। বেচারা একা পড়ে গেছে এই জঙ্গলে। শেষ একটা সিগারেট ফুঁকে আমি বোঁচকা হাতে ঢুকে যাই। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে মুড়িওয়ালার চেহারাটা। এমিরাতসের মিষ্টি মেয়েটা সবঠিকঠাক করে দেয়।
বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে বলি, "ওব্রিগাদো.."
না নাজানা মেয়েটাও কিছুবলে প্রত্যুত্তরে। আমি হাসি, সেও হাসে। পা বাড়াই, সিকিউরিটি পার হই, ইমিগ্রেশন পার হই। ঝকঝকে একটা বোয়িং ৭৭৭ অপেক্ষা করে আছে। গুয়ারুলঅস এয়ারপোর্টের দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে মনে মনে বলি, "থ্যাংক ইউ সাও পাওলো! কতোই না দেখার ছিল এ জীবনে!"।

Sunday, March 2, 2008

ইবলিশের সাথে চৌদ্দটা রেমি মার্টিন

মাথাগুঁজে প্রথমআলো পড়ছিলাম। হঠাৎ ঘাড়ে হাত। ঘাড় ঘুরোতেই দেখি স্বয়ং ইবলিশ। ঢেউ খেলানো বাবরি চুল আরেকটু কাঁধ ছাড়িয়ে গেছে, পরনে সেই ঘিয়ে রঙের আরমানি স্যুট। ঝকঝকে দাঁতগুলো বের করে বলে, "বোঁসু আঘুপ.."
-হাই কেলভিন! হোয়েন ডিড ইউ রিচ?
আমি মুখে যথাসম্ভব তেলতেলে একটা হাসি ধরে রাখি। মাথার ভিতরে বুমবুম আওয়াজ তুলে বিস্ফোরিত হতে থাকে একেকটা আগ্নেয়গিরি। ভদ্রলোকের নাম কেলভিন টং ওরফে ইবলিশ। ইবলিশ আমার ফরাসি কাস্টোমার (যদিও একই কাম্পানীর, তারপরেও যেহেতু তারা সার্ভিস কেনে তাই তাদের কাস্টোমার হিসাবে ধরা হয়) এবং আমার পেশাগত জীবনকে সফলভাবে ফানাফানা করায় তার অবদান ব্যাপক।

সম্পর্কটা ভালোই হবার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম ইমেইলেই সে জানালো আমি ছাড়াও তার চাপকানোর প্রচুর বেড়াল আছে। এই জাতীয় কথার পর সাধারনত দেরি না করে মানব সম্পদে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। ইবলিশের ক্ষেত্রেও সেটা করতে দেরী হলনা। ঝাঁকি খেয়ে শালা মিষ্টি করে ক্ষমা চেয়ে লক্ষী ছেলে হয়ে গেল। শুধু বছরের শেষে স্যাটিসফ্যাকশান সার্ভেতে যেন আমরা পাঁচে এক পাই সেটা নিশ্চিত করতে ভুললো না। ফলাফলটা শুভ হয়নি আমাদের জন্য। এরকম ঘটনায় যে কোন নীরহ মানুষ নেইলকাটার দিয়ে ইবলিশের চোখ তুলে নেবার ধান্দা শুরু করে দিতে পারে। ভব্যতা-সভ্যতা আর এইচআরের আইনের শেকল পড়ে আমি শুধু ফোঁস করে দম ছাড়ি। আর কনফারেন্স কলের সময় মিনিটস নোটে, কেলভিন টং নামটা কেটে চ-যুক্ত কিছু অশ্লীল যৌনবিষয়ক গালমন্দকে বিষয়বস্তু বানিয়ে বাংলা ক্যালিগ্রাফির চর্চা করি।

বস পাশেই বসে। উঁকি দিয়ে বললাম,
-"....এর ভাই টার সাথে কি ডিনারে যেতেই হবে?"
-"ইউ মাস্ট, উই মাস্ট সিকিউর এ ফোর দিস টাইম.., বি দেয়ার বাই সেভন.."

ভাগ্যিস মেয়ে হয়ে জন্মাইনি, না হয় দেহ দিতে হবে জাতীয় কোন ডিরেক্টিভ চলে আসতো। হোয়াক থু করে একদলা থুতু ফেলতে ইচ্ছা করছিল। সেটা সম্ভব হলনা, জীবনে মাঝে মাঝে নিজের থুতু নিজেরই গিলতে হয়।

খানাদানা ভালোই। আমি নীরবে একটা নিউইয়র্ক স্ট্রিপ আর জ্যামাইকান প্যারাডাইস খাচ্ছিলাম। বাগড়া দেয় ইবলিশ।
"লেটস ড্রিংক জেন্টেলমেন.."
আমার বস হাসি দেয়। ইয়েমারা খেতে হবে বললেও সে না করবে না।

"এসকুজে মোয়া মাদমোজেল, ডু ইউ হ্যাভ হেমি মাহতা?" । ওয়েট্রেস মেয়েটা খানিকটা হতভম্ভ হয়ে যায়। কেলভিন মালেশিয়ান চীনা, দুবছর পারিসে থেকে শালা ফরাসি অ্যাকসেন্টে ইংরেজী বলে, র অক্ষরটা তখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই ভাবে রেমি মার্টিন চাইলে মনে হয় কারোই বোঝার কথা না। তবে মেয়েটা চালাক, সে চট করে পানীয়ের মেনুটা সাথে নিয়ে আসে।

- ডাবল শট, নীট, নো আইস, নাথিং, ফর ইচ অফ আস সিল ভু প্লে..

রেমি মার্টিন শানদার সুরা, কনিয়াক (cognac)। কনিয়াক মূলত ফরাসী অঞ্চল, এইখানকার খাস ব্র্যান্ডির নাম কালান্তরে হয়ে গেছে কনিয়াক। স্বাদ হোক আর চল্লিশ ভাগ অ্যালকোহলই হোক এই পানীয় সমঝে চলার বস্তু।

ওয়েট্রেস ছোট শট গেলাসে পানীয় দিয়ে গায়েব হল। কনিয়াক খেতে হয় পেটমোটা গবলেটে, শট গেলাসে পরিবেশন সুলক্ষন নয়।

"হাউ ডু ইউ ওয়ান্ট টু ড্রিংক? ক্যান আই প্রোপোজ বটমস আপ?"

আমরা দেঁতো হাসি দেই, যারা ইয়েমারা পর্যন্ত খেতে রাজি তাদের বটমস আপ আর টপ ডাউন নিয়ে কি বলার থাকতে পারে।

"অ্যাহ,,," অর্ধেকটা খেয়ে বস গেলাস নামাতে বাধ্য হয়। -"নো ওয়ে কেলভিন.."
-"ইফতিকার... দ্যাটস নো গুড.."

এদিকে আমার আর ব্রায়ানের গেলাস খালি। চোখাচোখি হল, মনে হল আমরা দুজনই একসাথে গাল দিলাম কপালকে!

....

সপ্তম গেলাস আসতে আসতে চিলিজ বন্ধ হবার পথে। সাতটা ডাবল শট রেমি মার্টিন কনিয়াক মানে চৌদ্দটা রেগুলার শট। ইবলিশ বাদে আর একটা মানুষ ভাবলেশ হীন, ব্রায়ান। ইফতেখার ভাই আধা বেঁকে বসে আছে, আর আমার কান ভোঁ ভোঁ করছে। ঘোলাটে চোখেই দেখতে পারি সেই মুক্তোঝরা দাঁতের পাটি। বিল এসেছে ১৪০০ রিঙ্গিত (২৮০০০টাকা)।

"দিস মানি কান্ট বাই ইউ ইভেন আপ্রেতিফ ইফতিকার.. ইন ফঁস"
ইবলিশের কথা শুনে ইফতেখার হোসেন অনেক কষ্ট করে হাসবার চেষ্টা করে, কার্ডের বিলে সাইন করতে গিয়ে হোসেইনের এইচটা বিশ্রীভাবে বাঁকা হয়ে যায়। এই বার স্যাটিসফ্যাকশান সার্ভেতে চার পেতেই হবে তার।
"সি ইয়া জেন্টেলমেন, থ্যাংক্স ফর দ্য ডিনার.."
তারপর ইবলিশ আমার দিকে তাকিয়ে বাঁ চোখটা টিপে দেয়।
...
ঘোর মদ্যোপ হয়ে তেইশ কিলো ড্রাইভ করতে রওনা দেই। পথে হোসেন ভাইকে নামিয়ে দিতে হবে। ড্রাংক ড্রাইভিং এর জন্য পুলিশ এখানে কঠিন ছ্যাঁচা দেয়। কিছু করার নাই। স্যাটিসফ্যাকশান সার্ভেতে চার পাওয়াটা জরুরী আরও জরুরী বসের দেখভাল..
...
আধঘন্টা পর বাসায় ফিরে লিফটের কাছে বসে পড়ি। আমার কেন জানি মনে হতে থাকে এবারো আমরা এক পাবো, তা ইবলিশের কাছে যতোই আত্মা বেচতে বসি না কেন...
"ফাক!!", আধখাওয়া ডানহিলটা ছুড়ে দিয়ে আমি লিফটের বোতাম টিপি...