১.
ছোট বেলায় স্কুল শেষে বড়মামার বাড়িতে যেতাম, ডাল-ভাত খেয়ে অপেক্ষা করতাম কখন মা এসে বাড়ি নিয়ে যাবে। একবার মা এলেন, হাউমাউ কান্না। সাতবছরের শিশুর জন্য ঘটনাটা বিস্ময়ের, ভয়েরও।
"ওরা গাড়ি হাইজ্যাক করেছে", আমার অসহায় মায়ের আহাজারি..
ভিসির বাসার সামনে মা'র ছাত্ররাই তাদের শিক্ষিকার গাড়ি ছিনতাই করেছেন। তখন বিপ্লবের সময়। হলুদ নাম্বার প্লেটের গাড়ি কব্জা করাটা রাজনৈতিক দর কষাকষির ভালো উপায় হতে পারে, জনৈক মধ্যবিত্ত শিক্ষকের লাভ-ক্ষতি মুখ্য হওয়া সঙ্গত নয়।
২.
কারফিউ শব্দটার মানে যখন কেবল একটু বোঝা শুরু করেছি, তখন একটা দৃশ্য দেখে খুব মজা লেগেছিল। কাটাবন (এখন যেখানে বিদেশী মাছের বাজার) রেলগেটের রাস্তায় একজন কান ধরে ওঠাবসা করছেন, সমুখে অস্ত্র হাতে দেশ রক্ষার অতন্দ্র সৈনিক, জলপাই রঙা পোষাক তার। তখন খিলখিল করে হেসেছিলাম ভাইয়ার সাথে, আজকে আর হাসি পায় না।
৩.
আজিজ মার্কেটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আজ ছাত্রদের পিটিয়ে জন্মের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে (সূত্র: বিবিসি বাংলা, অগাস্ট ২৩, প্রবাহ)। ওই বাড়িগুলোতে এক সময় থাকতাম আমরা। কেমন হতো আমার বুয়েট পড়ুয়া ভাইটাকে লাথি মারলে, ছাত্র হওয়াটাই যখন দোষ। আমি প্রাণপনে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দিতে চাই।
৪.
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ফোর সিজনস জ্বলে পুড়ে শেষ। ১ নম্বরে পাশের বাসার চাচার গাড়িটাও ভাঙ্গা হল আরো দশটা গাড়ির সাথে। আমার বুড়ো বাবা যখন মনে প্রাণে নিরাপত্তা খোজেন, তখন আমি কারফিউ শুনে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।
৫.
বিপ্লব আসে সময়ের প্রয়োজনে। বিপ্লব বিলাস আসে অপ্রয়োজনে। আর অপবিপ্লব আসে স্বার্থের লোভে। আমরা মাঝে মাঝে নির্বোধের মতো ভুলে যাই কোনটা কি। আবেগ আর আবেগ বিলাস, সীমারেখাটা ভুলে গেলে বিপদ।
৬.
ভালো লাগছে না.. হতে পারি "ব্লাডি মধ্যবিত্ত" কিংবা "ব্লাডি সিভিলিয়ান"..
তারপরও ভালো লাগছে না