রোডট্রিপ জিনিসটা সবার হজম হয়না। মোটাভাই আর ভাবীর ক্ষেত্রে সেটা খাটলো না। তারা কুয়ালা তেরেঙ্গানু ট্রিপে বের হয়ে ব্যাপক মজা পেয়ে গেলেন। তাই ফেরার পথেই আমরা ঠিক করেছিলাম দীপাবলীর ছুটিতে আবার বের হবো।
দীপারায়ার ছুটি কাছে এগিয়ে আসতেই ঝামেলা শুরু হয়ে গেল। শখ ছিল রেদাং দ্বীপে ঢুঁ মারবার, এমন ফটিক স্বচ্ছ নীল পানি আর বাহারী মাছের দেখা নাকি খুব সহজে দেখা যায় না। গোল বাঁধালো আবহাওয়া, নভেম্বরে এখানে বর্ষা শুরু হয়, উত্তরের সব দ্বীপগুলোতে তখন হোটেল/মোটেলগুলো বন্ধ করে দেয় মাস তিনেকের জন্য। কি করা যায়! ট্রিপ কি ভেস্তেই যায়? স্মোকিং রুমে দেখা হল অ্যাডাম রাফায়েনস্কির সাথে। ব্যাটা চান্স পেলেই সমুদ্রে যায় স্কুবা ডাইভিং করতে।
“লাঙকাওয়ি যাও, এটাই ভালো সময়”, কেন্টের স্টিকে টান দিয়ে অ্যাডাম মাথা দুলিয়ে বলতে থাকে, “ফাইভ আওয়ার্স টু কুয়ালা কেদাহ, দেন টেক আ ফেরী টু দ্য আইল্যান্ড”
আমি আর মোটাভাই চোখাচোখি করি, রাজী না হবার কারনই নেই।
আমরা রওনা দেব ৭ই নভেম্বর, বুধবার। অফিস করেই বের হয়ে পড়ার ধান্দা। আমি আবার সম্প্রতি একটা স্মার্টফোন কিনেছি শখ করে, তাতে হাইস্পীড ইন্টারনেট আর জিপিএস বসানো আছে, তাই হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা নাই। লাও ইয়াত প্লাজায় গিয়ে তাতে ২০০৭ এর ম্যাপ লোড করে আনলাম, সাথে গুগলম্যাপস ফর মোবাইল। গুগলম্যাপস ফর মোবাইল কঠিন বস্তু! গুগল আর্থকে কেঁটেছেঁটে মোবাইলফোনের জন্য তৈরি করছে গুগল। সাধারন জিপিএস এর ম্যাপ যেসব স্থান কাভার করে না, গুগলম্যাপস সেসব জায়গায় বেশ কাজে আসে। মুস্কিল একটাই, মোবাইলে ডেটা কানেকশন থাকা চাই পুরোটা সময়, ফলে পয়সা খরচের একটা ব্যাপার থেকেই যায়।
প্রথমে প্ল্যান ছিল রাত একটার বাস ধরে কুয়ালা পারলিস চলে যাব, সেখান থেকে ফেরী নিয়ে লাঙকাওয়ি। বাস ধরতে হলে একটা তাড়াহুড়োর যন্ত্রনা থাকে। শেষে ঠিক হল গাড়ি নিয়েই যাব কুয়ালা কেদাহ পর্যন্ত, সেখানে তিন দিনের জন্য গাড়ি রেখে ফেরী ধরে গন্তব্যে পৌছানো হবে। কুয়ালা কেদাহ যেতে ঘন্টা পাঁচেক লাগে, যেতে হয় ইপো-র উপর দিয়ে। এই রাস্তার ব্যাপক সুনাম অসম্ভব সুন্দর চারপাশের সব দৃশ্যাবলীর জন্য। রাত একটার যাত্রা শেষপর্যন্ত শুরু হল ভোর তিনটায়। আমাদের মতো পাগল না হলে রাত তিনটায় কেউ রোডট্রিপে বের হয় না, স্পেশালী যখন আকাশ ভেঙ্গে ঝড় বাদল হতে থাকে।
কুয়ালা কেদাহ পৌছতে পৌছতে সকাল নটা বেজে গেল, টোল দিতে হয়েছে প্রায় ৩৫ রিঙ্গিত! কেদাহ থেকে লাঙকাওয়িতে ঘন্টায় ঘন্টায় ফেরী যায় (সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত যদিও), ১৮ রিঙ্গিত করে টিকেট। ফেরীতে ঠেসে মানুষ তোলে, তাই বসতে কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তু দেড়ঘন্টার ফেরীযাত্রার পরে যখন লাঙকাওয়ি দ্বীপ চোখের সামনে হাজির হয় তখন আর ক্লান্তি শ্রান্তি কোনটাই মাথায় থাকে না। দুপুর দেড়টার সময় আমরা যখন কুয়াহ (লাঙকাওয়ির সী-পোর্ট) জেটিতে পা দিলাম তখন আমাদের চারজনেরই মুখেই আকর্ন বিস্তৃতহাসি!
লাঙকাওয়ি নামের উৎস নিয়ে অনেক গল্প আছে। ভাষা মালায়াতে “হেলাঙ” মানে মেছো ঈগল, আর “কাওয়ি” (সংস্কৃত) মানে মার্বেল। এই দুটো জিনিসই এখানে প্রচুর পাওয়া যায় বলে নাকি এই দ্বীপের নাম “হেলাঙকাওয়ি”, পরবর্তীতে, “লাঙকাওয়ি”। অন্য সূত্রানুসারে, “লংকা” (সংস্কৃতে যার অর্থ সৌন্দর্য) ও “য়ি” (সংস্কৃত, অসংখ্য) এদুটি শব্দের সন্ধিতেই “লাঙকাওয়ি” নামের জন্ম।
লাঙকাওয়ি দ্বীপটি কেদাহ-এর সুলতানিয়াতের অংশ ছিল। কিছু দিন থাই ও ব্রিটিশরাজের অধীনে থাকার পর এটি মালেশিয়ার অংশ হয়। জলদস্যুদের ঘাঁটি হিসেবে কুখ্যাত এই দ্বীপটি এখন মালেশিয়ার সবচে’ জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটের একটি এবং এর পিছনে সম্পূর্ন অবদানই সেই ড. মাহাথিরের। মাহাথির চালাক মানুষ। পুরো দ্বীপটাকে ডিউটি ফ্রি করে দিয়েছেন, সাগর তীরে পানির দামে মদ খাওয়া আর ফুর্তি করতে চাইলে লাঙকাওয়িতে না এসে কি পারা যায়?
কুয়াহ জেটিকে সাজানো হয়েছে এয়ার পোর্ট স্টাইলে, চোখ ধাধিয়ে যাবে নিসন্দেহে। জেটিতে নেমেই আমার প্রথম ধান্দা হল টাকা তোলা, এ দ্বীপে এটিএম মেশিন তেমন একটা নেই, তাই মোটা অংকের টাকা তুলে নিতে হবে সাথে, ক্রেডিট কার্ড এর কদর তেমন একটা নেই এখানে। টাকা তুলবার পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন কাজ হল একটা গাড়ি যোগাড় করা। গাড়ি নিতে লাইসেন্স থাকতে হবে, সেটা আসল নকল যাই হোক না কেন। পাজেরো থেকে মিনি সবই ভাড়া দেবার জন্য সাজানো, আমি হ্যাচব্যাক চালিয়ে অভ্যস্ত তাই একটা কেলিসা নিয়ে ফেললাম। কেলিসা ছোট্ট ছিমছাম গাড়ি, দিন প্রতি ৮০ রিঙ্গিত ভাড়া। মোটাভাই ৯০ রিঙ্গিতে একটা প্রোটন ভিরা নিলেন (নিশান সেন্ট্রা নিলে ১৩০)।
লাঙকাওয়ি দুর্দান্ত সব হোটেল আছে, তাদের প্রাইভেট বীচ-ও আছে। প্রাইভেট বীচ শুনতে আহামরি হলেও সুস্বাদু নয়। আমদের গন্তব্য পানতাই চেনাঙ বা চেনাঙ সৈকত। চেনাঙ সৈকতের ধারে অনেকগুলো চমৎকার মোটেল আছে, মানুষও যায় প্রচুর, তাই একটা উৎসবমুখরতা থাকে সবটা সময়। গেলবার ছিলাম এবি মোটেলে, এবারো রুম খালি পেয়ে উঠে গেলাম। এবি মোটেল এর ভাড়া ৯০ রিঙ্গিত। এসি রুম, দুটো ডাবল বেড। ওয়াইফাই আছে, আছে সাইবার ক্যাফে, লন্ড্রী, রেন্ট-এ-কার (এবং মোটরবাইক ও সাইকেল)। জানিয়ে রাখলে টুর ম্যানেজ করার ব্যবস্থাও আছে। মোটের উপর এর চেয়ে সস্তায় আর ভালো কিছু পাওয়ার কথা ভাবাই যায় না। এদের খাবারও খুব ভালো, আর দামেও কম।
এবি মোটেলের ঠিক সামনেই সৈকত। সৈকতে শুয়ে বসে বইপড়া আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। যাদের বেশী শখ তারা কেউ জেটস্কি নাহলে প্যারাগ্লাইডিং করে ফিরছে। আমরা গেছি রিল্যাক্স করতে, পানিতে পাডুবিয়ে বসে থাকতে পারলেই চলে।
লাঙকাওয়িতে দেখার জিনিস আছে প্রচুর। বার্ডপার্ক আর আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ড চমৎকার জায়গা । তবে তার চাইতে স্পীডবোটে চড়ে আইল্যান্ড হপিং এ বের হওয়া কিংবা ম্যানগ্রোভ বনে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে বেশী। তবে চরমতম আকর্ষনীয় হল পুলাউ পায়ারে মেরিন পার্ক দেখতে যাওয়া। প্রায় ২০০ রিঙ্গিত লেগে যেতে পারে যদি স্কুবা ডাইভিং করার ইচ্ছা থাকে। পুলাউ পায়ার ছোট্ট দ্বীপ, এর ফটিক স্বচ্ছ পানিতে হাজারো রঙিন মাছের বাস, স্নোরক্লিং পাগলদের তীর্থস্থান বলা যেতে পারে (যেতে গেলে অন্তত একদিন আগে বুকিং দিতে হয়, না হলে পস্তাতে হবে আমার মতো)।
প্রথম দিন মাশীদ আব্দার শুরু করলো রাজকন্যা মাহশুরীর মোসেলিয়াম দেখবে বলে। মাহশুরীর বিয়ের কথা ছিল কেদাহর সুলতানের সাথে। কিন্তু মিথ্যা ব্যভিচারের দায়ে তাকে মৃত্যূদন্ড দেওয়া হয়। মাহশুরী মরবার আগে অভিশাপ দিয়ে যান লাঙকাওয়ি দ্বীপকে। মোসেলিয়াম এ হাজির হয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হল। টুরিস্টদের পকেট হাতড়ে দুটো টাকা নেওয়ার জন্য এরা মহা তৎপর।
ফেরার পথে কুয়াহ থেকে একটা ম্যালিবুর বোতল কেনা হল (শোমচৌ এর কুবুদ্ধি!), সৈকতে থাকবো আর ক্যারিবিয় পানীয় গলায় ঢালবো না তা কিভাবে হয়!
প্রচুর টুরিস্ট আসে বলে এখানে দোকান পাটের সংখ্যা কম নয়। শুধু চেনাঙ সৈকতের ধারেই দেখা যাবে শ’খানেক দোকান-কাপড়, জামা, জুয়েলারী, কিউরিউ কিংবা কনভিনিয়েন্স! অনেক কিছুই কেএল এর সেন্ট্রাল মার্কেটে পাওয়া যায়। কিন্তু সেন্ট্রাল মার্কেটের কথা আর কজনই বা জানে?
পরদিন সকালে মোটাভাই এর গাড়িতে চড়ে আমরা বের হলাম গুনুঙ রায়া পাহাড়ের দিকে। গুনুঙ রায়া এই দ্বীপের সর্বোচ্চ পাহাড়। এই চূড়োয় গেলে নাকি থাইল্যান্ডও দেখা যায়। মোটাভাই ভালো পাইলট, ভয়ঙ্কর আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ি তরতরিয়ে নিয়ে গেলেন। পাহাড়ী রাস্তার দুপাশে ঘন ট্রপিকাল রেইনফরেস্ট। খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে সব উঁচু উঁচু গাছ। একটু পর পরই রোড সাইন, সর্তক করে দিচ্ছে সাম্ভাব্য পাহাড়ী ধ্বস থেকে। রাস্তাধরে কিছু দূর যাই আর দেখা হয় একদল বানরের সাথে। এই দ্বীপে এতো বানর আছে সেটা জানা ছিল না। গুনুঙ রায়ার মাথায় কারা যেন রিসর্ট বানাচ্ছে, এখনো পুরোটা শেষ হয়নি, আমরা তারই পার্কিং এ গাড়ি রেখে দৃশ্য দেখতে বের হলাম। উচ্চতম শৃঙ্গ থেকে এই স্বপ্নদ্বীপ দেখা এক অসাধারন অভিজ্ঞতা।
পাহাড় চুড়োয় বেশ ঠান্ডা, ভ্যাপসা গরমের দেশে বড়ই আরামদায়ক, উপরন্তু গাড়ির এসি কাজ করছিল না! মিনিট বিশেক থেকেই আমরা নামতে গেলাম। মাঝপথে বিচিত্র আওয়াজ শুনে গাড়ি থামলো। এ যে ধনেশ পাখি! এর আগে পাঙকোর দ্বীপে ধনেশ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। এখানে আবার দেখে ছবি তুলতে গেলাম। ভীতু পাখিটা ক্যামেরা টের পেয়েই ভাগলো। কপাল ভালো ছিল, একটা শট কোনমতে নেওয়া গেছে!
গাড়ি আবার চলা শুরু করলো, হঠাৎ ভীষন বাজে গন্ধ! নাড়িভূড়ি দলা পাকিয়ে বের হয়ে যায় যায়। পিছনে কিছু একটা পড়ে আছে, সম্ভবত গন্ধ সেখান থেকেই। মোটাভাই খাড়া রাস্তায় রিভার্সে যাওয়া শুরু করলেন, কৌতুহল কঠিন জিনিস। কাছে গিয়ে ছবি তোলা গেল না, অসম্ভব পচাঁ গন্ধ যে! কিন্তু আমরা হতবাক, জিনিসটা আর কিছুই না, পাচঁ ফুট লম্বা একটা অজগর, সম্ভবত গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে কদিন আগে, সেটাই পঁচে গিয়ে দুর্বিষহ গন্ধে পাগল করেছে চারদিক!
দুপুরে লাঞ্চ করে আবার অভিযান, এবার যাত্রা ম্যানগ্রোভ বনে। সাগরের নোনা পানির পাড়ের গাছগুলোতে শ্বাসমূল জন্মায়। সুন্দরবনে এমন গাছ প্রচুর, এখানেও যে আছে সেটা জান্তাম না। স্পীড বোটে করে ছোট খাড়ি ধরে যাচ্ছি আমরা। দুপাশে ঘন বন। তাতে যতো না পাখি তার চেয়ে বেশী বানর।
নৌকাওয়ালা আমাদের তীরে নামিয়ে দিয়ে হাতে একটা টর্চ ধরিয়ে দেয়। তারপর পট করে গায়েব হয়ে গেল। ম্যানগ্রোভ বনের মাঝে কাঠের ব্রীজ, সেই ব্রীজ ধরে যেতে হবে। আমাদের গুহা দেখবার শখ বড়, বলা হয়েছে সামনে পড়বে বাদুরগুহা। গুহামুখ দেখতে পেয়ে ঢুকে গেলাম। স্ট্যালাকসাইট (stalactite) এর কথা ভূগোল বইতে পড়েছিলাম, চাক্ষুষ দেখার সুযোগ পেয়ে মন্দ লাগলো না। এদিকে মোটাভাই টর্চ নিয়ে বাদুড় খুঁজতে উঠে পড়ে লেগেছেন। আমি ব্যস্ত ছবি তোলায়। ফ্ল্যাশ জ্বলতেই অবাক, পুরো গুহার ছাদ জুড়ে হাজারো বাদুড় ঝুলে আছে! ভাগিস্য এরা অযথা উড়ে বেড়ায় না! নাহলে প্যানিক করে মাশীদ আর বর্না ভাবী মারা যেত!
বাদুড় গুহা দেখে নৌকা রওনা দিলো মোহনার দিকে। সেখানে জাল দিয়ে ঘেরা জায়গায় অদ্ভুত সব মাছ দেখিয়ে পয়সা কামাচ্ছে এক মালে পরিবার। জলজ্যান্ত মোরে ঈল, স্টিং রে, স্টিং কাকড়া, ব্যাটফিশ এবং আরো অনেক মাছ। মাশীদ খুব শখ করে স্টীং রে টাকে টুনার টুকরা খাওয়াবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু মাছটা এতো এগ্রেসিভ যে বেচারী সাহস পেল না বেশীক্ষন চেষ্টা করার।
নৌকাওয়ালাকে কোক ঘুষ দেবার বদৌলতে সে মোটাভাইকে ওপেন সী-তে বোট চালানোর অফার দিয়ে বসলো। মোটাভাই চারচাক্কার ওস্তাদ, প্রপেলারের ওস্তাদ হবার সুযোগ ছাড়েন কি করে!
রাতে আমরা খেলাম ভারি চমৎকার একটা রেস্তরায়, নাম রোজ টি। থাই খাবারের দোকান। বলা দরকার যে এই দ্বীপটি থাইল্যান্ড থেকে ৪৫ মিনিট দূরে, আর আগে শ্যাম রাজের অধীনেও ছিল। তাই থাইদের প্রভাব আছে ভালোই।
তৃতীয় দিনে আমার যাবার কথা ছিল পুলাউ পায়ারে। বুকিং না দেওয়ায় যাওয়া হল না। মন খারাপ করে মাশীদকে নিয়ে বার্ড পার্কে গেলাম। গতবার বার্ড ফিডিং করতে গিয়ে মজা হয়েছিল। পাখি দিয়ে ছেয়ে গিয়েছিল সারা শরীর। এবারো খাবার কিনে ঢুকলাম ভিতরে। পাখিরা এবারে তেমন খাবার ধান্দায় না থাকলেও, একটা কালো বানর ব্যাপক সৌজন্যের সাথে মাশীদের দেওয়া বাদাম খেয়েছে। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী বলেই ফেললেন এই বাদরটাকে কোলে নিয়ে তিনি সারা জীবন বাদাম খাওয়াতে রাজী। চিন্তার বিষয়!
বার্ড পার্ক থেকে ফিরতে গিয়ে জানলাম আইল্যান্ড হপিং এ পুলাউ বেসারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানকার হালকা ঘোলা পানিতে কিঞ্চিৎ স্নোরক্লিং করা যেতে পারে। আর যায় কোথায়। আমি লটকে গেলাম। স্পীডবোটে প্রায় আটজন যাত্রী, লাইফ জ্যাকেট পরা সবারই। সাগরে ভীষন ঢেউ ওঠে, সাবধান না হলে অঘটন ঘটে যেতে পারে। আমার কিছু হয় নি, শুধু একপাটি জুতো গায়েব হয়ে গেল!
আইল্যান্ড হপিং এর প্রথম কাজ হল ঈগল ফিডিং। পানিতে টুনার টুকরো ছুড়ে মারা হয়, লাঙকাওয়ির বিখ্যাত সব “হেলাঙ” (মেছো ঈগল) ছোঁ মেরে তা খেতে আসে। সেই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে বড় বেগ পেতে হল।
পুলাউ বেসার গিয়ে দেখি কেউ লাইফ জ্যাকেট ভাড়া দেয়না। অগত্যা সেটা ছাড়াই হাটু পানিতে স্নোরক্লিং করতে নামলাম। লাভের মধ্যে লাভ হল, লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই পানিতে ভাসা শিখে গেলাম! এবার একটা জোড়া ফ্লিপার কিনতেই হবে দেখছি!
মাশীদও পানি দেখে নেমেছিল, তবে বেচারী কেন যে ঠিক সুবিধা করতে পারলো না বোঝা গেল না। এনিওয়ে ৩৫ রিঙ্গিতের এই ট্রিপটার আনন্দ কোন অংশেই কম না। দুঃখ শুধু পুলাউ পায়ারের জন্য।
সন্ধ্যায় মাশীদ আর বর্না ভাবী শখ হল শাড়ী পড়ে সাগরে নামার। সুর্যাস্তে নামার প্ল্যান থাকলেও তারা নামলো আঁধার হয়ে যাবার পরে। লো লাইটে বহু কষ্টে ছবি তুলতে হল।
আমি জীবনের প্রথম মার্গারিটা খাই এই চেনাঙ বীচে। বার টেন্ডার দেখতে ছিল একেবারে বব মার্লের ছোট ভাই। এবার তাই মাশীদেরও শখ ছিল এদের মার্গারিটা চেখে দেখার। খোঁজ নিতেই জানা গেল বারটা উঠে গেছে। সামনে আরেকটা বার দেখে বসে গেলাম। একদম খোলা সৈকতে টেবিল। ককটেইল আর তাপাস পাওয়া যাবে। মার্গারিটার সাথে আন্দালুসিয়া ক্যালামারী আর সফ্ট শেল ক্র্যাব ফ্রিটার নেওয়া হল তাপাস হিসাবে। ক্যালামারী হল রিঙ এর মতো করে কেটে ডিপ ফ্রাইড স্কুইড! সফ্ট শেল ক্র্যাব আমার অতি প্রিয় জিনিসের একটা। সদ্য খোলস বদলানো কাকড়ার খোসা খুব নরম হয়, চিবিয়ে খেতে সমস্যা হয় না। এখন সেই জিনিসকে যদি টেম্পোরা স্টাইলে ভাজা হয় তখন তার স্বাদ হয় অমৃততূল্য! মুস্কিল হল, তাপাসের স্বাদ লোভনীয় হলেও মার্গারিটা ছিল চরিত্রহীন। চরিত্রহীন মার্গারিটা খাওয়া মহা অন্যায়!
যাই হোক, ছোট্ট এই ছুটিতে লাঙকাওয়ি দেখা সহজ নয়। বুধবার গিয়ে রোববারে ফিরে আসতে হলে মন খারাপ হয়ে যায়। কি আর করা! সোমবারে তো অফিস। কতো জায়গা এখনও দেখা হয়নি, পাহাঙ, কাপাস, রেদাঙ, পেরহেন্থিয়ান... ধূর! আবার কবে যে একটা লঙ উইক এন্ড পাই?