Friday, March 5, 2010
অপেক্ষা
ফেব্রুয়ারির ঢাকা হল নস্টালজিয়ার ঢাকা, উৎসবের ঢাকা, জেগে ওঠার ঢাকা। সেই ঢাকাকে আমি দেখিনি গত পাঁচ বছরে, শীতের শুরুতে আসি, মাঝটায় ফিরে যাই। ফেব্রুয়ারির মুকুলগন্ধা বাসন্তীরঙা শহরটাকে আর দেখা হয়না কোনবারই। এবার কথা ভিন্ন, বেকার বলে ছুটির ঝক্কি নেই, কিন্তু বাঁধ সাধে পয়সা, ক'দিন আগেই দুমাস থেকে গেছি। আবার গাঁটের পয়সা খরচা করে দেশে আসাটা বিলাসিতায় ঠেকে যায়। তারপরও শেষমেষ আসা হয়ে গেল। মাশীদের বই, প্রথম বই, বের হল এই মেলাতেই। মেলায় এখন ঘটা করে বই এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়, মাশীদ সেই সুযোগ ছাড়বে কেন। রিটন ভাইকে বলায় তিনি রাজী হয়ে গেলেন (এই লোকটা আমাদের দুইজনের প্রতি যে ভালোবাসাটা দেখিয়েছেন তার ওজন করা বড্ড কঠিন, রিটন ভাই আপনি ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন) । এদিকে আমার হঠাৎ মাথায় এলো আগের পুলিস সার্টিফিকেটটা বাতিল হয়ে গেছে। নতুন একটা নিতে আমি যেতেই পারি। তাই শেষে দুজন একসাথেই চলে এলাম, ঢাকার সাথে দেখা হল ফাল্গুনের প্রথম দিনে।
দীর্ঘ সময় পর বইমেলায় হাজির হবার আনন্দ প্রবাসী না হলে কারো টের পাবার কথা না। আমি তাই খানিকটা হুটোপুটি করে জাপটে ধরি আমার ধুলোপড়া যানজটে আটকে থাকা ময়লা শহরটাকে। এই শহরটা আমার, ক'টা দিনের জন্য এটাই আমার সাম্রাজ্য। বৃষ্টিহীণ দীর্ঘদিনের জমে থাকা ধুলোর সাথে মিশে যেতে আমার একটুও কষ্ট হয়না।
লোকে প্রশ্ন করে, "খারাপ লাগে না?"। আমি বলি না। রোমে গেলে রোমান হতে হয়। যানজটের ঝক্কি আমার পোহাতে হয়না, পায়ে হাটি বলে। ভাবতে হয়না গাড়ি নিয়ে, বনানী যাই না যে! বাসা-বইমেলা-শাহবাগ-ছবিতোলা এই মনোটোনির ভেতরেই এই আমি সেই আমির সাথে বসে গল্প করে কিংবা বিষবৎ চায়ে চুমুক দিয়ে আড্ডা দেয়।
তারপর দিন ফুরিয়ে আসে..
মৃত্যূ কেমন? এই প্রশ্নটার উত্তর কেউ পায়না। প্রতিবার দেশত্যাগের সময় আমি টের পাই। শেষকটা দিন আমার বড় ছটফট করে কাটে। "কী যেন করা হলনা" কথাগুলো ঘুরতে থাকে মাথায়। এবারও তাই হল, টিকিট পিছিয়ে দিলাম। বাড়ির কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ পাল্টানো, একটা ইউপিএস কেনা কিংবা ডিভিডি ড্রাইভটা পাল্টে ফেলা এমন কোন জরুরী কাজ না। পুত্র হিসেবে দায়িত্ব এড়ানোর অপরাধবোধের ঘূণপোকা মগজ খামচে ধরে থাকে। এটা কিনে, সেটা ঠিক করতে করতে যখন মন শান্ত হয়, মনকে বোঝাই এখন বোধহয় মরা যায়। মনে হয়, ইমিগ্রেশনের গেট পার হবার সময় বোর্ডিং পাসটাকে একটু কম ভারী ঠেকবে।
এবারে দেখা হল পলাশ দত্তের সাথে, দেখা হল ধ্রুব হাসানের সাথে, দেখা হল আলী মাহমেদের সাথে। আলী মাহমেদ, এবারও আপনার বাড়ি যাওয়া হল না। ক্ষমা করবেন, একদিন সত্যিই যাবো..
সামনে অনেক ওলটপালট দিন জমে আছে। কাজে ঢুকে গেলে উল্টে যাবে আরো অনেক কিছু। গেলে যাক.. আমি লক্ষীছেলের মতো অপেক্ষা করতে পারি..
(ছবিটা তোলা কলাকোপা বান্দুরা থেকে, টিটিএলকে ধন্যবাদ তাদের দলে নেবার জন্য)
6 comments:
To comment in Bangla, please use Avro Keyboard Interface. Click here for Bangla Installation Guide.
বাংলায় লিখতে অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করুন. বাংলা ইন্সটলেশন গাইড পাবেন এখানে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
বইমেলা আমিও দেখি না ৫ বছর।এটা শেষ পর্যন্ত কত বছর হবে কে জানে।
ReplyDeleteকলাকোপা গিয়েছিলাম মনে হয় ২০০৩ সালে। একাত্তরের যীশু ছবিটার কিছু শুটিং মনে হয় ঐখানেই হয়।তখন ডিজিটাল ছিল না। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট কিছু ছবি তুলেছিলাম রেবেলটা দিয়ে। ঐগুলা কোথায় কে জানে ! গির্জার ছবি দাও মিয়া। আর নদীটা একটা জায়গায় ইউ শেপের হয়। ঐ জায়গাটা খুবই সুন্দর ছিল।
Onek din por tomar lekha porlam, r borabor er motoi mugdho hoilam. Montao udash hoilo...
ReplyDeleteR o lekho ..onek lekho...
Masud
একদিন আমরাও ..
ReplyDeleteঅপেক্ষা ভালো জিনিস! শুনে সুখী হলাম। তবে এটা কচ্ছপের মুখ থেকে শুনতে পেলে আরও সুখী হতাম।
ReplyDeleteঅনেকের সঙ্গে আমার ভাবনার অনেকখানি তফাৎ আছে। কেউ যখন বলেন, নেক্সট সামারে...। আমি তখন হাতে কিল মেরে বলি, নেক্সট সামার কে দেখেছে, বাওয়া?
ঝামেলাটা হওয়ার পর জুবায়ের ভাই আলাদা করে মেইল করেছিলেন, "দেশে আসলে আপনার সঙ্গে দেখা হবে। আপনার এখানে আসব।"
মানুষটা কথা রাখেননি! পাখি উড়ে যায়, ফেলে যায় পালক- মানুষ চলে যায় রেখে যায় স্মৃতি।
ছবি তোলার নাট-বল্টু নিয়ে কেউ যখন পিঠে প্যারাসুট ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমি ভেবে কূল পাই না, এর মানে কী! কিন্তু এই ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে, আহা, পিঠে জাহাজের সমান ব্যাগ বইতে হলেও সমস্যা কী?
দুর্দান্ত ছবিটা! অসাধারণ বাচ্চাগুলোর অভিব্যক্তি! তবে...। ফিগারের সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড পছন্দ হলো না- এটা আমার পছন্দ, আমার মত।
না গিয়ে মনে তো হচ্ছে ভালোই হল..
ReplyDeleteনা হলে আপনি কি এইখানে পা মাড়াতেন?
আশ্চর্য হলাম, অনেকখানি..
এই দুর্দিনে আশ্চর্য হওয়াটা বড় আরামদায়ক..
ভালো থাকবেন, শেষবেলার দুপুরের খাবারে শরীক হওয়া হলোনা।
ReplyDelete