Thursday, August 23, 2007

এলোমেলো কথা - ০৩

১.
ছোট বেলায় স্কুল শেষে বড়মামার বাড়িতে যেতাম, ডাল-ভাত খেয়ে অপেক্ষা করতাম কখন মা এসে বাড়ি নিয়ে যাবে। একবার মা এলেন, হাউমাউ কান্না। সাতবছরের শিশুর জন্য ঘটনাটা বিস্ময়ের, ভয়েরও।
"ওরা গাড়ি হাইজ্যাক করেছে", আমার অসহায় মায়ের আহাজারি..
ভিসির বাসার সামনে মা'র ছাত্ররাই তাদের শিক্ষিকার গাড়ি ছিনতাই করেছেন। তখন বিপ্লবের সময়। হলুদ নাম্বার প্লেটের গাড়ি কব্জা করাটা রাজনৈতিক দর কষাকষির ভালো উপায় হতে পারে, জনৈক মধ্যবিত্ত শিক্ষকের লাভ-ক্ষতি মুখ্য হওয়া সঙ্গত নয়।

২.
কারফিউ শব্দটার মানে যখন কেবল একটু বোঝা শুরু করেছি, তখন একটা দৃশ্য দেখে খুব মজা লেগেছিল। কাটাবন (এখন যেখানে বিদেশী মাছের বাজার) রেলগেটের রাস্তায় একজন কান ধরে ওঠাবসা করছেন, সমুখে অস্ত্র হাতে দেশ রক্ষার অতন্দ্র সৈনিক, জলপাই রঙা পোষাক তার। তখন খিলখিল করে হেসেছিলাম ভাইয়ার সাথে, আজকে আর হাসি পায় না।

৩.
আজিজ মার্কেটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আজ ছাত্রদের পিটিয়ে জন্মের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে (সূত্র: বিবিসি বাংলা, অগাস্ট ২৩, প্রবাহ)। ওই বাড়িগুলোতে এক সময় থাকতাম আমরা। কেমন হতো আমার বুয়েট পড়ুয়া ভাইটাকে লাথি মারলে, ছাত্র হওয়াটাই যখন দোষ। আমি প্রাণপনে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দিতে চাই।

৪.
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ফোর সিজনস জ্বলে পুড়ে শেষ। ১ নম্বরে পাশের বাসার চাচার গাড়িটাও ভাঙ্গা হল আরো দশটা গাড়ির সাথে। আমার বুড়ো বাবা যখন মনে প্রাণে নিরাপত্তা খোজেন, তখন আমি কারফিউ শুনে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।

৫.
বিপ্লব আসে সময়ের প্রয়োজনে। বিপ্লব বিলাস আসে অপ্রয়োজনে। আর অপবিপ্লব আসে স্বার্থের লোভে। আমরা মাঝে মাঝে নির্বোধের মতো ভুলে যাই কোনটা কি। আবেগ আর আবেগ বিলাস, সীমারেখাটা ভুলে গেলে বিপদ।

৬.
ভালো লাগছে না.. হতে পারি "ব্লাডি মধ্যবিত্ত" কিংবা "ব্লাডি সিভিলিয়ান"..
তারপরও ভালো লাগছে না

Monday, August 13, 2007

এলোমেলো কথা - ০২

শুক্রবার গাড়িটা হাতে পেয়েছি। অনেকটা মাথা গরম করেই কেনা। গাড়ি হাতে পেয়েই ঘোরাঘুরি! আমি গাড়ি হাকানো মাচোম্যান ছিলাম না ঢাকায়। কেএল এসে খানিকটা ঠ্যালায় পড়েই (এবং ধার করে) কিনে ফেলা। অতি উৎসাহে দুদিনে দুশো তেইশ কিলো ড্রাইভ করে আজ প্রাণ যায় যায়। ঢাকায় কখনও হাইওয়ের এক্সিট খুঁজতে হয়না, এখানে সেটা মিস করলে মোটামুটি মালয়শিয়ার আরেক প্রান্তে চলে যাবার সম্ভাবনা প্রবল! পয়সার অভাবে জিপিএস কেনা হয়নি, সাইনপোস্টগুলোই ভরসা, যদিও মালয়শিয়ার সাইনপোস্টের বিশেষ সুনাম আছে বিভ্রান্ত করার বিষয়ে।

কথা ছিল লাল রঙ দেখে কিনবো, শেষে পেলাম অ্যাপল গ্রিন, কি আর করা, তাই সই!

এখানে রাস্তায় বেকুবের মতো কিছু করলে পেছন থেকে হংক করে, বেশী ক্ষেপলে গাড়ি কাছে এনে কটমট করে তাকায়, যেন পারলে ভস্ম করে ফেলে! গত দুদিন দুডজন বার হর্নের শব্দ শুনে নিজের উপর ভরসা করা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গেছিলাম দামানসারা, কিন্তু ফেরার রাস্তা জানিনা। মাসুদ ভাই বিশেষ স্নেহ করেন, তাই পেছন পেছন ফলো করে বাসায় পৌছে দিলেন, রাস্তা ভুল করলে হর্ন বাজান, আমি লেন বদলাই। শেষ পর্যন্ত বাসায় ফিরতে ফিরতে কালঘাম বের হয়ে গেল।

গাড়িতে ক্ল্যারিয়নের একটা সিডি প্লেয়ার আছে। গাড়ি কেনার উৎসাহে আমি প্রতিদিন গানের সিডি বার্ন করে যাচ্ছি। ফুয়াদের "নিটোল পায়ে" মুখস্থ হবার পথে।

লোকে বলে জীবনের প্রথম গাড়িটাকে নাকি সহজে ভোলা যায়না, যতই খারাপ আর ভাঙ্গাচোরাই হোক, অসংখ্য স্মৃতিময় দিনের সাক্ষী হয়ে থাকে সে। পার্ক করে লিফটের দিকে পা বাড়ানোর আগে গভীর মমতায় হাত রাখি ছাদে, এই দেশ ছাড়ার সময় একেও ছাড়তে হবে। নিষ্প্রাণ একটা যন্ত্রের জন্যেও আমরা কতো মায়াই না জমিয়ে রাখি বুকে..



Wednesday, March 29, 2006

প্রনতি হে বেজন্মার জাত

মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু সচেতন অপমতদাতার পরিমান এতো হবে আশা করিনি।

তথ্যপ্রমানের কি এতোই অভাব ছিল?
শুধু যুদ্ধের ছবিগুলোই কি যথেস্ট ছিল না হৃদয়ে সামান্য হলেও বোধ জাগানোর জন্য? নিজের স্বত্তা আবিস্কার করতে উৎসাহিত হবার জন্য?
প্রচুর মানুষের জীবনের বদলে একটা দেশ পাওয়া। সেই মুক্তিযুদ্ধ হয়ে গেল গন্ডগোল। মানুষ মরল ৩০ লাখ, ৩৩ বছর পর সেটা হল ৩ লাখ, ৩ তিন দিন পর হল ৩ হাজার, সাথে ক্রুর উপহাস। কেউ "আসত" বোধ নিয়ে সাফাই গাইলেন নিয়ে চাঁদ-তারা আওয়ামের অখন্ডতার পক্ষে। লাল সবুজ পতাকায় গার্ড অব অনার নিল শেয়ালেরা। "অতীত নিয়ে পড়ে থাকা" গন্য হতে শুরু হল নির্বুদ্ধিতা রূপে।

এই যদি হতে থাকে, তবে তাই হোক।

হয়তো বদলাবে "আমার সোনার বাংলা"। হয়তো বদলাবে সবুজের বুকে লাল সূর্য। বদলাবে ইতিহাস।

মুক্তিযুদ্ধ বন্দী থাক হৃদয়ে। ওই গৌরব গাঁথা কারো করুনায় গড়া নয়, সূর্য সন্তানদের দায়িত্ব ছিল দেবার, তারা দিয়ে গেছেন।

বেজন্মার জাত বেঁেচ থাক রক্তের নোনা স্বাদ নিয়ে ।
এখন আর কারোই কিছু আসে যায় না...

আমরা কি সহজেই না সবকিছুতে অভ্যস্ত হতে পারি...


সামহয়ারইন ব্লগে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর তৎপরতার প্রতিবাদে লেখা হয়েছিল ২০০৬ এর মার্চে


মূল লেখাটা আছে এখানে

Tuesday, March 14, 2006

ছবিই কথা বলে


Je vais te casser la gueule!

এই বান্দরটা কি আপনার থোতা মুখ ভোঁতা করতে চায় ?
"সম্মিলিত বান্দর প্রতিরোধ আন্দোলন"

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .


জনৈক স্বাধীনতাবিরোধীর তনয় যখন লোকজনকে বেসবল ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে মেরুদন্ড ভাঙ্গার ভয় দেখায় তখন শুরু হয় "সম্মিলিত বান্দর প্রতিরোধ আন্দোলন"।

হিমু প্রস্তাব করে, "আমি সক্কলের প্রতি করুণ নিবেদন করছি, আসেন, এই ফডুর সাথে খাপ খাইয়ে একটি গল্প, কিংবা প্রতিবেদন, আমরা লেখার চেষ্টা করি। কে শুরু করবে? অপু একটা ঠ্যালা দে ভাবের রেলগাড়িতে"

তারপর শুরু হয় পোস্টের প্লাবন। ব্রাত্য রাইসু স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ক্ষেপে গেলেন, "সম্মিলিত বান্দর প্রতিরোধ আন্দোলন" নিয়ে, জানালেন তার ক্ষোভ।

তখন রাসেল ভাই এর মন্তব্য, "বান্দর প্রজাতির পক্ষ থেকে পালটা অভিযোগ এসেছে, তাদের ছবি পোষ্টে প্রকাশ করাটা তাদের প্রতি চরম অবমাননা, তাদের মুখপত্র জানিয়েছেন, বান্দরের মতো শৃংখলাপরায়ন জাতি প্রতিবাদ হিসেবে আগামি কাল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকি অনশন করবে।পরবর্তি সংবাদেরজন্য চোখ রাখুন। আমরা জানা মাত্রই আপনাদের জানাবো"

মূল পোস্ট এখানে

Saturday, March 11, 2006

৫৮৬ বর্গফুট

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় প্রথম নিজের ঘর পাই। অদ্ভুত সেই ঘর। শীত গ্রীষ্ম, সারা বছর দিনের বেলা সে ঘরে থেকে মনে হতো আকাশ মেঘলা। পরবাসে এসে প্রথম দিকে ছিলাম এক সহকর্মীর বাড়ি। নানা কারনে আর থাকা হল না সেখানে। মামুন ভাই এর কল্যানে নিজের ফ্ল্যাটে উঠলাম। খালি ফ্ল্যাটের খালি তোষকে শুয়ে রাত পার করলাম, নিজের বাড়ি এই উত্তেজনায় ঘুম হল না। এগারোশো বর্গফুটের সেই আশ্রয়ে প্রায় পুরো সময়টাই কেটেছে নিঃসঙ্গ। টাইমজোনের কারনে বাড়ি ফিরি রাত একটা - দুটোয়। যখন সারা শহর ঘুমোয় আমি নিজের বাড়ি নিয়ে ব্যস্ত হই। রাধি, টিভি দেখার ব্যর্থ চেষ্টা। কখনও জুম লেনস দিয়ে রাস্তার ফুড কোর্টের ছবি তুলি। একলা ঘরের সাথে একলা জীবন। কখনও এঘর-ওঘর করে কাটে। এন্ডা রিগ্যালের কন্ডো ছেড়েছি গতমাসে। এখনকার আশ্রয় আরো ছোট, 586 বর্গফুট। সার্ভিস এপার্টমেন্ট, বেশী কিছু ভাবতে হয়না। চাইলে এনিয়ে গর্ব করাও যায়। তারপরেও 586 বর্গফুটের বন্দিশালায় হাসফাস করি। দীর্ঘশ্বাস ধাক্কা খায় সিলিং এ..। জীবনটা বড় জটিল হয়ে গেল...

Friday, March 10, 2006

ট্রিবিউট টু শোহেইল মতাহির চৌধুরী

শোহেইল ভাই এর উৎসাহে অনেকদূর আসা হল । আমাদের চিন্তার চৌবাচ্চার প্রতি তাই কিছুটা শ্রদ্ধা এই ছবিটা দিয়ে। রাইসু ভাই কে বিট করতে পারলাম না অবশ্য.. [পেইন্ট দিয়ে আকা মহা কঠিন]

Thursday, February 2, 2006

বেকার স্ট্রীট

বেকার স্ট্রীট যাবার ইচ্ছেটা ছিল শুরু থেকেই। শেষদিনটায় একা একা টিউবে চেপে বসলাম। পৌছে দেখি সব বন্ধ। কনকনে হাওয়া আর হাড়কাপানো শীত। তবুও খুশি। শার্লক হোমস এর মূর্তিটাতো দেখা গেল!

পেনাং দ্বীপের মন্দির

পেনাং দ্বীপে যেতে হয়েছিল মাশীদের যন্ত্রনায়! ঘুরতে ঘুরতে হাজির শায়িত বুদ্ধের মন্দিরে। চমৎকার এই দ্বীপে দেখার জিনিসের অভাব নেই! যারা জানেন না, তাদের বলি পেনাং মালয়েশিয়ার উত্তর পূর্বে, চাইলে কে.এল. থেকে বাসেই যাওয়া যায়।

চাইমস, সিঙ্গাপুর

ব্যাপারটা ঠিক সাধারন নয়, ব্যতিক্রমী বলাই ঠিক। পুরোনো ক্যাথিড্রাল ঠিকঠাক করে এমন চমৎকার আড্ডার জায়গা বানানো সম্বব সেটা চাইমস এ না গেলে ঠিক বোঝা যাবে না। সিঙ্গাপুরে গিয়ে এটা মিস করাটা ভুল হবে। আর যদি এখানে অসাধারন একটা ডিনার উপভোগ করতে চান তবে ল বারোক এ যেতে পারেন র্নিভাবনায়।

শ্রী পেতালিং

ভালোবাসার দেশ ছেড়ে বাসা বেধেছিলাম একটা ছোট্ট শহরে, নাম শ্রী পেতালিং। ২০০৫ এর ফেবরুয়ারির ৬ তারিখ। হাইওয়ে দিয়ে ঝড়ের বেগে গাড়ি ছুটিয়ে চলছে স্যাম। শার্টের হাতা দিয়ে মাঝে মাঝে চোখের কোনা মুছে যাচ্ছি। দীর্ঘ পথের যখন শেষ, আমি হাজির এক অচেনা শহরে। আজ একটা বছর পরে সেই শহরই আমার সমস্ত দুঃখ, একাকীত্বআর আনন্দের সঙ্গী। শ্রী পেতালিং, তোমার জন্য ভালোবাসা..

বাংলা ব্লগে এটাই আমার প্রথম লেখা, প্রকাশিত হয় সামহয়ারইনব্লগে, ২০০৬ এর ২রা ফেব্রুয়ারি। তখনও ব্লগোস্ফিয়ারের অলিগলি টের পাইনি, বাংলায় লিখতে পারাটাই তখন সবচে' বড় আনন্দ!


এই লেখাটা পড়ে প্রথম মন্তব্য ছিল মাশীদের..
আজ থেকে এক বছর আগে
তোমার আমার ছাড়াছাড়ি
যাবার বেলায় দুঃখ কত
রাগ - অভিমান - মারামারি

সিঙ্গাপুর টু মালয়েশিয়া
মাঝখানে এক সাগর পাড়ি
চোখের জলে যাই ভেসে যাই
অন্য পাড়ে তাড়াতাড়ি

দুই শহরে থাকছি দু'জন
কাজের চাপে ব্যস্ত ভারি
এনডা রিগাল, শ্রী পেতালিং
আজ আমাদের উইকেন্ড বাড়ি

...