Wednesday, April 22, 2009

তিওমানের ছবি

Sunset at Tioman Island (Salang Beach) (by αгυρ / অরূপ)
সালাং সৈকতের সূর্যাস্ত


Fish Paradiso @ Tioman Island (by αгυρ / অরূপ)
মেরিন পার্কের মাছ (আন্ডারওয়াটার ফিল্ম ক্যামেরায় তোলা)


Corals of Tioman Island (by αгυρ / অরূপ)
মেরিন পার্কের মাছ (আন্ডারওয়াটার ফিল্ম ক্যামেরায় তোলা)



Tioman from Salang Jetty (by αгυρ / অরূপ)
সালাং জেটি


Salang Beach (by αгυρ / অরূপ)
সালাং সৈকতে


Salang Beach (by αгυρ / অরূপ)
সালাং সৈকতে

Salang Jetty at Night (by αгυρ / অরূপ)
রাতের আলোয় সালাং জেটি

Open-air Restaurant at Salang Beach (by αгυρ / অরূপ)
সৈকতে রেঁস্তোরা


Salang Jetty in the Evening (by αгυρ / অরূপ)
রাতের সালাং জেটি

...

তিওমানে স্কুবা ডাইভিং


আমি আর ডেভিড, এপ্রিল ১৬, ২০০৯ ছবি: মুস্তাফিজুর রহমান

পানিতে আমার ভীষণ ভয়। কিন্তু স্নোরকেলিং এর নেশায় পাবার পর এখন নীল পানি দেখলেই ঝাঁপ দিতে ইচ্ছা করে। এদিকে কিন্তু সাঁতার একদমই পারি না। মুস্তাফিজ ভাই এর সাথ এবার তিওমান গিয়ে মনে হল স্কুবা ডাইভিং বিষয়টা চেখে দেখি। এখানে শেখায়, লাইসেন্স পেতে হলে যে কোর্স করতে হয় তাতে প্রায় হাজার রিংগিত লাগে। তিওমান যাবার আগে শুনেছিলাম, একদম নবিশদের জন্য আধাঘন্টার ডিসকাভারী ডাইভ বলে একটা প্রোগ্রাম আছে। ১৬তারিখ সালাং এ নেমেই তাই দুইজনে গেলাম ডাইভএশিয়া ডাইভিং সেন্টারে। জনপ্রতি খরচ ১৮০ রিংগিত। আমরা মোটেও দমে যাবার পাত্র না। সাইনআপ করে ফেললাম। ইন্সট্রাক্টর আইরিশ, নাম ডেভিড ও'ডোনোভান (David O'Donovan)। মাঝবয়েসী, হালকা ভুড়িও আছে, কিন্তু মানুষ সরস। ব্যাটা ফিটনেস এর খবর নিয়ে ৪০মিনিটের একটা ভিডিও দেখতে বসিয়ে দিল। ভিডিও দেখলেই হবে না, দেখার পর একটা ট্রু ফলস্ মার্কা পরীক্ষাও দিতে হবে। পরীক্ষা শেষে ভদ্রলোক প্যাচাল পারলেন আরো ত্রিশ মিনিট, কি করাবেন, কিভাবে করাবেন এইসব। আমার তো আর তর সয় না! ফাইনালি আমরা কাধে বিসিডি (বয়ান্সি কন্ট্রোল ডিভাইস) চাপিয়ে, ফিন-স্নরকেল-মাস্ক-ওয়েটসুট পড়ে নাবলাম জলে। পানি গলা সমান, জায়গাটার নাম রজার্স রীফ। ফিন পড়ে হাটাই কষ্ট, হাটতে হয় পিছন ফিরে। পানির নিচে কথা বলা যায় না, আকার ইংগিতে প্রশিক্ষন শুরু হল। মুখ থেকে রেগুলেটার খুলে পড়ে গেলে সেটাকে কিভাবে খুঁজে এনে মুখে দিতে হবে, গ্যাস শেষ হলে বন্ধুর এমার্জেন্সি রেগুলেটার কিভাবে ব্যবহার করতে হবে এইসব ছিল শেখার বিষয়। শেখানো শেষ হলে ডেভিড খাড়িটা ঘুরিয়ে দেখালো। ডিসকাভারি কোর্সে প্রশিক্ষক ছাড়া জলে নামা বারন, আর রাখাও হয় অগভীর জলে। পানি থেকে উঠে আমার আর মুস্তাফিজ ভাই এর কী উত্তেজনা!

পয়সা হলে লাইসেন্স নিতে হবে, সাথে একটা ভালো আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা.. আহা!..



আমাদের ট্রেইনার ডেভিড ও'ডোনোভান (David O'Donovan)

আমার ডাইভশীটটা রইল এখানে। ডাইভ সম্পর্কিত অনেক তথ্য আছে এখানে (ক্লিক করলে বড় হবে)

ক্যারিফিয়েস্তার ফুল

The Flower from Martinique (by αгυρ / অরূপ)
কাজের প্রয়োজনে বেশ কিছুদিন মন্ট্রিয়লে ছিলাম। একে তো সামার, তার উপরে থাকি ডাউনটাউনের সবচে' সরগরম জায়গাটায়। কোনমতে পাঁচটা দিন পার করতে পারলেই উইকএন্ড, আর উইকএন্ড মানেই হেটেহেটে শহরটার সাথে আড্ডা দেওয়া। এক উইকএন্ডে হাটতে হাটতে চেনা সেন্ট ক্যাথরিন স্ট্রিট ছেড়ে চলে গেলাম বুলভা হ্রেনে-লেভস্কে। বুলভা হ্রেনে-লেভস্ক হল বড় রাস্তা। বড় রাস্তায় গিয়েই অবাক, গাড়ি নাই, ঘোড়া নাই, শুধু দূরে বাজছে ক্যালিপসো ঢাকঢোল! শব্দ শুনে সামনে যেতেই পরিস্কার হল ঘটনা, প্যারেড চলছে, ক্যারিবিয়ানদের প্যারেড, যাবে এই বুলভা ধরেই। নানা রঙে আর সজ্জায় সেজেছে সবাই। কেউ পাখি, কেউ ফুল, কেউ নাচে, কেউবা গায়। সুদীর্ঘ সেই শোভাযাত্রা যাকে স্থানীয়রা বলে ক্যারিফিয়েস্তা প্যারেড। শোভাযাত্রার শেষভাগে ছিল এই কিশোরী, ফুল সেজেছিল সে। মাঝবেলার তাতানো রোদে তাকে বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। কিন্তু সে আজ ক্যারিফিয়েস্তার ফুল, তাকে কি ক্লান্ত হলে চলে। পানির বোতলটা একটু মুখে ছুইয়েই সমস্ত উদ্যাম নিয়ে সে এগুতে থাকে আবার। আমি ছবি তুলি, ফুলকুমারী হাত নেড়ে হাসে..

হোটলে ফিরতে ফিরতে মনটা বিষন্ন হয়ে পড়ে, শেষ কবে পয়লা বৈশাখে গিয়েছিলাম তা আর মনে পড়েনা.. সময় আমাদের কতো কিছুই না ভুলিয়ে দেয়..

Tuesday, April 21, 2009

তিওমান দ্বীপে প্রথমবার..

প্ল্যানটা মাশীদের, তিওমান যাবে সঙ্গী হবে টিনা, ইন্দ্রনীল আর আমি বোচকা বাহক। ম্যাডামের কথা ফেলা কি যায়? যায় না... তাই দুদিন ছুটি নিলাম।

তিওমান এই প্রথম যাচ্ছি। মালেশিয়ার শ্রেষ্ঠ বীচের একটা রেদাং আরেকটা তিওমান। তিওমান যাওয়া সহজ নয়। প্লেন এ যাওয়া যেত, শখও ছিল। কিন্তু বেরজায়া এয়ারের টিকিট (২৫০ রিঙ্গিত ওয়ান ওয়ে) পাওয়া গেল না। তাই বাধ্য হয়ে গেলাম পুডুরায়া বাস টার্মিনালে। বাস যায় মার্সিং পর্যন্ত। মার্সিং থেকে ফেরী বা স্পীডবোটে তিওমান যাত্রা (এক/দুই ঘন্টা, ৩৫-৪৫ রিঙ্গিত)। রাত সাড়ে দশটার বাসের টিকিট কিনেছিলাম ২৪ রিঙ্গিত দিয়ে। বাসা থেকে বেরোতে গিয়ে দেখি সাড়ে দশটা। বুঝলাম বাস মিস হবে, আর মাশীদের ক্যাচক্যাচানি শুনতে হবে ছয় মাস। গিয়ে দেখি বাস তখনও লোক তুলছে। শেষে ছাড়ল রাত এগারোটায়।

মার্সিং এ পৌছেছি ভোর সাড়ে ছ'টায়। দোকান থেকে তিন রিঙ্গিত দিয়ে নাসি লেমাক (নাসি = ভাত, লেমাক = নারকেলের ফ্যাট) দিয়ে নাস্তা করলাম। নাসি লেমাক মন্দ না, টিপিকাল মালে ডিস। সাদা ভাতের সাথে ডিম সেদ্ধ বা পোচ, অ্যানচভি (ছোটমাছের শুটকি) আর টমেটো, নারকেল দুধ, লালমরিচ আর মসলা দিয়ে তৈরি সাম্বাল - এই হল নাসি লেমাক। মাশীদরা সিঙ্গাপুর থেকে পৌছাবে সকাল এগারোটায়। তাই সাইবার ক্যাফেতে আড্ডা। তিওমানে নেট পাব কিনা জানি না। তবে মনমুগ্দধকর প্রকৃতি দেখার অপেক্ষায় আছি।
(এই টুকু লেখা হয়েছিল মার্সিং-এ বসে)


* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *













* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

মাশীদদের জন্য বসে ছিলাম সকাল ছটা থেকে। মার্সিং-এ বাস যেখানে থামে তার নাম আর এন্ড আর প্লাজা। এর পাশেই জেটি। আর এন্ড আর প্লাজা তে সব এজেন্টগুলোর কাউন্টার। হাতে সময় থাকায় সাইবার ক্যাফে খুজে বের করে সুমনদার সাথে গ্যাঁজাতে বসলাম। হঠাৎ মাশীদের এসএমএস। একটা ফোন নামবার দিয়েছে, ওখানে কল করে ফেরীর টিকেট যোগাড় করতে হবে। সাড়ে এগারোটায় ফেরী। ফোন করায় আমাকে বলা হল আর এন্ড আর প্লাজাতে চলে আসতে, ওখান থেকেই টিকেট দেওয়া হবে। আগেই বুকিং দেওয়া ছিল, তাই ঝটপট দুশো আশি রিঙ্গিত দিয়ে চারটা টিকেট কিনে ফেললাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমারা যে ফেরীটায় রওনা দিলাম বিকাল পাঁচটায়, সেটার তিনটায় ছাড়ার কথা ছিল! ঘটনা হল যাদের কাছে বুকিং দেওয়া হয়েছিল তারা কাজটা ঠিক মতো করেনি। ফলে জেটির কাউন্টার থেকে আমাদের না করে দিল। এগারোটার ফেরীতে তাই যাওয়া গেল না। চোটপাট করে টাকা ফেরত নিয়ে আবার টিকেট কাটলাম বিকেল তিনটার ফেরীর জন্য। সেই ফেরী ঘাটে এল সাড়ে চারটায়, ছাড়ল পাঁচটায়!














তিওমান ছোট দ্বীপ। দ্বীপের চারদিকের সৈকতে গড়ে উঠেছে সব জনবসতি। কিন্তু এক সৈকত থেকে আরেক সৈকত বিচ্ছিন্ন। আবার সৈকতভেদে বালুকাবেলার সৌন্দর্যেও অনেক পার্থক্য হয়। তাই তিওমানের ঠিক কোন সৈকতে যাবেন তা আগেই ঠিক করা প্রয়োজন। সোনালী বালু আর স্ফটিক সবুজ পানির জন্য সেরা সৈকত হল সালাং। টেকেক সৈকতও খারাপ না। আমাদের কপাল খারাপ। হোটেল পাওয়া গেল শুধু এয়ার বাতাং (এবিসি বীচ) সৈকতে (সাদামাটা সৈকত)। তিনটে জেটিতে লোক নামানোর পর ফেরী এয়ার বাতাং এর জেটিতে ঠেকে। জেটিতে যখন নামলাম তখন সম্পূর্ন ক্লান্ত-অবসন্ন। সামনে তাকাতেই কিছুটা ক্লান্তি ভুলে গেলাম। সবুজ স্বচ্ছ পানি! পিছে সারি সারি সব শ্যালে। আমরা উঠলাম জোহানস হাউস নামের একটা বাজেট হোটেলে। এসি ওয়ালা শ্যালের ভাড়া রাতপ্রতি আশি রিঙ্গিত। এখান থেকে সমুদ্র দেখা যায় না। বীচটাও পাথুরে আর ময়লা। নাজরী'স বরং ভালো। এদের শ্যালেগুলোর সম্মুখের সৈকত খবুই মনমুগ্ধকর। কিন্তু খরচও বেশী (১৬০ রিঙ্গিত রাতপ্রতি)। জোহান'স এর রেস্তোরাটা মন্দ না। বারবিকিউ করা টুনা আর সাদাভাত দিয়ে ডিনার করতে লাগল ১৭ রিঙ্গিত। টুনা ছাড়াও এখানে ব্যারাকুডা, স্টিংরে, স্কুইড এর বারবিকিউ পাওয়া যায়। নাসি গোরিং আর মি গোরিং (ভাজা নুডুলস) যে পাওয়া যায় সেটা বলাই বাহুল্য। ডিনারের পর বীচে ঘুরতে বের হলাম। সাগরের জলে ফসফরাসের আলোর কথা শুনেছিলাম, এবার সচক্ষে দেখা হল। ঘন্টায় চার রিঙ্গিত দিলে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। শখ থাকলে আর ভাড়া নেওয়া হয়নি। কিছদূর হাটার পর আমরা লক্ষ্য করলাম তিওমানে প্রচুর বিড়াল এবং অনেক-কটারই লেজকাটা! প্রতিদিন রাতে ডিনারের সময় মাশীদকে এরা বিরক্ত করে ব্যাপক আনন্দ লাভ করত এবং আমার স্ত্রীও বিড়াল দেখে যারপরনাই সন্ত্রস্ত হতেন।










রোববার সকালে উঠে জানলাম আমরা স্পীডবোট নিয়ে বের হচ্ছি। দিবসের প্রধান কার্যক্রম হবে স্নরকেলিং। ইন্দ্রনীল দশ রিঙ্গিত দিয়ে গিয়ার ভাড়া নিল। আমি তো সাঁতারই জানি না, তাই উৎসাহ দেখালাম না। আমার ধান্দা ছবি তোলা। লো টাইডের জন্য বোট এল সাড়ে এগারোটায়। আমাদের সঙ্গী হল দুই সুইডিশ তরন-তরুনী (মেয়েটার নাম সিসিলিয়া এটা মনে আছে)। লাংকাওয়িতে আইল্যান্ড হপিং এর সময় স্পীডবোটে চড়েছি। সেবার ভয় পেয়েছিলাম, এবার আত্মা কেঁপে উঠল। বিশাল ঢেউ এ পড়ে স্পীড বোট একটু পরপর লাফ দেয়। তারপর যখন পানিতে ধাপ করে পড়ে, আমরা সবাই তখন প্রায় ছিটকে পড়ি পানিতে! জান যায় যায়! ভাগ্যিস লাইফজ্যাকেট পড়া ছিল সবার। প্রায় আধা ঘন্টা যাবার পর বোট থামল সাগরের মাঝে অদ্ভুত একটা যায়গায়। কিছু পাথর জড়ো হয়ে দ্বীপের মতো হয়ে আছে। প্রাকৃতিক না মানুষের গড়া জানিনা, কিন্তু দেখতে অবাক লাগে। সারেং বলল এখানে স্নরকেলিং করতে। ইন্দ্রনীল আর সুয়েড গুলো নেমে গেলে। মাশীদ আর টিনা তখন রুটি ছিড়তে ব্যস্ত মাছকে খাওয়াবে বলে। আমি রেডি হলাম ছবি তুলতে। মাশীদ রুটির টুকরো ছোড়ে আর তা পানি ছুতে না ছুতেই শেষ করে দেয় একদল কালো ডোরাকাটা নীল মাছের দল। এদের দলে একটু পর ভীড়ে গেল কিছু প্যারট ফিস আর হলদে মাছ। হঠাৎ পাশে ভুস করে ইন্দ্রনীল মাথা উঠাল পানি থেকে। জিজ্ঞেস করলাম কেমন, উত্তর দিল অসাধারন। কি যেন হল। আর সামলাতে পারলাম না। আমি সাঁতার পারি না তো কি! লাইফ জ্যাকেট পড়ে, ইন্দ্রনীলের স্নরকেলিং গিয়ার পড়ে ঝাপ দিলাম নীল জলে। জীবনে আগে স্নরকেলিং করিনি, তাই প্যানিকড হয়ে গপগপ করে নোনা পানি গিলে ফেললাম। প্রায় ডুবি আর কি। অনেক কষ্টে সামাল দিয়ে কিছুটা শান্ত হয়ে আবার ডুব দিলাম। এবং পরবর্তী বিশ মিনিট নেশা গ্রস্ত হয়ে গেলাম। আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা নাই বলে দেখাতে পারলাম না কি যে অসাধারন আর অপার্থিব সে দৃশ্য। টলটলে নীল পানি, নিচে নানা রঙের কোরাল আর তাতে নীল-হলুদ সব বিচিত্র মাছের খেলা। টিভিতে অনেকবার দেখেছি, নিজ চোখে দেখার আনন্দই আলাদা। ইন্দ্র ডুব সাতার জানত, তাই তার দেখার আনন্দ ছিল আরও গভীর। সে সাঁতরে সাঁতরে ক্লাউন ফিশ ("ফাইনডিং নিমো" এর নিমো) দেখে ফেলল এক ফাঁকে। একঘন্টা পর আমরা এই কোরাল রীফ থেকে আরেকটা বীচে গেলাম। সেখানেও একই ঘটনা। সোনালী বালু আর সবুজ স্বচ্ছ পানি, তাতে বিচিত্র মাছের খেলা। তিনটার দিকে আমরা সালাং গিয়ে লাঞ্চ করলাম। তারপর মাঙ্কি বে হয়ে ঘরে ফেরা। কিন্তু পুরোটা সময়ই মাথায় ঘুরছিল সেই সাগরতলের অপরূপ দৃশ্যের কথা । বেশী সাঁতরে বেড়ানোয় ছবি তোলা হয়েছে কম। কিন্তু স্নরকেলিং এর অভিজ্ঞতাটা তো অসাধারন! তাই প্ল্যান করেছি এরপর রেদাং গিয়ে আবার স্নরকেলিং করব। সাতার শিখতে পারলে ভালো হত, আরও ভালো হত স্কুবা ডাইভিং এর লাইসেন্স থাকলে। যাই হোক, বেশ মজা হল অনেকদিন পর। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে সারা গা ব্যথা হয়ে গেল। ডিনার করলাম আগে আগেই। তারপর হাঁটাহাটি চলল মাঝরাত পর্যন্ত।

আজ (৫ই জুন, ২০০৬) সকাল সাড়ে সাতটার ফেরী ধরে এগারোটায় মার্সিং পৌছালাম। সাড়ে এগারোটার বাসে আমি কেএল আর ওরা সিঙ্গাপুর রওনা দিল। শখ ছিল আরও কটা দিন থাকব। সমস্যা হল তিওমান, লাংকাওয়ির মতো অতোটা গোছানো না। তাই আগে থেকে কিছু ঠিক না করা থাকলে মহা ঝামেলায় পড়তে হয়। রেদাং-এ এই সমস্যাটা আরও বেশী। ঝামেলা যাই হোক নেক্সট অ্যাডভেঞ্চার, রেদাং-এ হবে, তাতে সন্দেহ নেই...


(প্রথম প্রকাশঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/arupblog/10773 ০৫ ই জুন, ২০০৬ সকাল ১০:৩৪ )

মুস্তাফিজনামা

কম্পিউটারে বসে ছিলাম। হঠাৎ গুগলটকের উইন্ডোতে মেসেজ আসে, "আমাকে একটা আইটানেরারি ঠিক করে দেন, ১৫ তারিখে আসব.."

আর কেউ না, মুস্তাফিজ ভাই। আমি মস্করা করে ডাকি দশবাইশ ভাই বলে। দশবাইশ ভাইও শীতলমুখে মস্করা করতে পটু। তাই ঠিক বুঝতে পারলাম না সে আসলেই আসছেন কিনা। একবার প্ল্যান ক্যানসেল হয়েছে ম্যালেরিয়ার কল্যাণে। রোগ থেকে উঠেই, বৌ-বাচ্চা ফেলে সে যে সত্যিই আসবেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।

বাঙালীর অ্যাডভেঞ্চার প্রীতি কম। এদের কাছে ভ্রমন মানে দেশের বাড়ি (তা শহর থেকে গ্রামেই হোক আর বিদেশ থেকে বাংলাদেশেই হোক) যাওয়া। এই আধাবুড়া লোকটাকে যখন বললাম চলেন স্নোরক্লিং করতে যাই, সে আমাকে ভীষন অবাক করে দিয়ে রাজী হয়ে গেল। আমি মনে মনে বললাম, "বাহ!"

১৫ তারিখে এয়ারপোর্টে গিয়ে কাউকে দেখা গেল না। আমি সবসময় দেরী করে যাই। ভাবলাম দেরী দেখে চাচামিয়া ট্যাক্সি নিয়ে কেটে পড়েছেন, কিংবা আদৌ আসেন নাই। এমন সময় পিছন থেকে এক হন্তদন্ত যাত্রী ধাক্কা দিল। ঢাকা হলে ঝাড়ি দেওয়া যেত, বিদেশে আমরা বড়জোড় অগ্নিদৃষ্টি দেই। চোখ পাকিয়ে তাকাতে গিয়ে দেখি দশবাইশ ভাই!!

অরূপ কেন ছবি তোলে?
অরূপ কেন ছবি তোলে?

হাতে সময় কম। বাসা থেকে মাশীদকে তুলে নিয়ে আমরা গেলাম টুইন টাওয়ার দেখতে। কিছু ছবি তুলে গেলাম বুকিত বিনতাং এ। ফোটোশুট আর ডিনার দুইই হবে সেথায়। মুস্তাফিজ ভাই টমইয়াম সুপ টমইয়াম সুপ করে বাই দিস টাইম কানের পোকা নাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই টমইয়াম সুপ, ব্ল্যাকপেপার বিফ আর চিকেন ফিশ দিয়ে ভুড়িভোজের আয়োজন হল।

টুইন টাওয়ার দেখে


কী যে তুললাম, বুড়া বয়সে চোখেও দেখি না!


খেতে খেতে..


বুকিত বিনতাং এর পথে


জালান আলোরে গিয়ে


বাড়ি ফিরে হালকা গোছগাছ করে আমরা ভোর তিনটায় রওনা দিলাম মার্সিং জেটির দিকে। জায়গাটা একদম দক্ষিনে সিংগাপুরের কাছে, যেতে হয় জোহর বারু রাজ্যের উপর দিয়ে। প্রথম আড়াইশো কিলো চালানোর পর আমার চোখ ঢুলুঢুলু। এদিকে দশবাইশ দাদারও গাড়ি চালানোর একটা চাপা খায়েশ ছিল। "চালাবেন নাকি?" জানতে চাওয়ায় চাচা রাজি হয়ে গেলেন। আমি নাক ডাকতে লাগলাম আর তিনি মনে আনন্দে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে সকাল আটটার দিকে মার্সিং হাজির হলেন। ভাবছেন রাস্তা চিনলো সে কেমন করে? এ আর কি কঠিন কাজ যদি GPS থাকে!


মার্সিং থেকে ফেরি নিয়ে যেতে হয় তিওমান দ্বীপে। তিওমান দ্বীপের অনেক সৈকত। আমরা গেলাম একদম মাথায়, সালাং সৈকতে। জেটিতে নেমেই মনটা ভালো হয়ে যায়। নীল পানি, সোনা সোনা বালি..

আমি বিড়বিড় করে আমীর খসরু আউরে যাই, "আগার ফিরদৌস বারুহে জমিনাস্ত, হামিনাস্তো হামিনাস্তো হামিনাস্‌ত.." (স্বর্গ যদি থাকে, তাহলে সে এখানেই.. এখানেই.. এখানেই..)

তিওমান দ্বীপে অবতরন

কিন্তু স্বর্গে নেমে দশবাইশ ভাই বিপদে পড়ে গেলেন। রোগে ভুগে প্যান্ট ঢিলা হয়ে গেছে, একটু পরপর ফট করে নেমে যায়। যাইহোক, টেনেটুনে কোনমতে ইজ্জত রক্ষা করে শ্যালেতে পৌছালাম আমরা। এরপর কি হল সেই গল্প মুস্তাফিজ ভাই বলবেন, কারন আমার গল্প ওনাকে নিয়ে, তিওমানভ্রমন এখানে ঠিক মুখ্য নয়।

প্যান্ট কেন ঢিলা?
প্যান্ট কেন ঢিলা?


স্কুবা ডাইভিং যখন করতেই হবে..
স্কুবা ডাইভিং যখন করতেই হবে..


এই ছেলে এতো ছবি তুলে কিসের ধান্দায়?
এই ছেলে এতো ছবি তুলে কিসের ধান্দায়?


যীশু যীশু ভাব, নবুওতের অভাব..
যীশু যীশু ভাব, নবুওতের অভাব..


এখনও তোলা শেষ হয় নাই?
এখনও তোলা শেষ হয় নাই?


দশ-বাইশে মৎস্য শিকার
দশ-বাইশে মৎস্য শিকার


সৈকতে কি খোঁজে সে?
সৈকতে কি খোঁজে সে?

ভাগ্যিস G9টা সাথে ছিল
ভাগ্যিস G9টা সাথে ছিল

বেশী টমইয়াম সুপ খেলে এই হয়
বেশী টমইয়াম সুপ খেলে এই হয়

ওই চিংকু, ফটু তোলা জানোস?
ওই চিংকু, ফটু তোলা জানোস?


তিওমানে দু'রাত থেকে আমরা বহু যন্ত্রনা করে কেএল ফিরে গেলাম। পথে ফ্ল্যাট-টায়ার হয়েছিল। চাচামিয়া বহু ঘাম ঝড়িয়ে চাক্কা পাল্টানোর কাজও করলেন। কি লজ্জার কথা! বেচারা অতিথি, তাকে এই কষ্ট না দিলেও হতো।

পরদিন দুপুরে মুস্তাফিজ ভাইকে নিয়ে আবার যাওয়া হল বুকিত বিনতাং এ, শপিং এর ধান্দায়। ভদ্রলোক লাওইয়াত প্লাজা থেকে দুম করে ছশো রিংগিত দিয়ে লোপ্রো ৪০০ অলওয়েদার কিনে ফেললেন। গর্বিত ব্যাগমালিক হয়ে দশবাইশ ভাই এর মুখ চকচক করতে থাকে। এমন সময় মাশীদ বললো সুংগাই ওয়াং প্লাজায় ফ্যাশন শো হচ্ছে। আমি আর মুস্তাফিজ ভাই দিলাম ছুট। মাথায় বাবরি, হাতে সাদালেন্স, পিঠে মোটকা ব্যাগ দেখে লোকজন যায়গা ছেড়ে দিল। দশবাইশ ভাই ফোটু খিঁচতে লাগলেন মনের সুখে।

শপিংমলেও রক্ষা নাই
শপিংমলেও রক্ষা নাই


শিকারী ও শিকার
শিকারী ও শিকার


The Proud Lowepro Owner!!!
গর্বিত ব্যাগমালিক


দুপুরে খাওয়া হল ব্যাংকক জ্যাম নামের রেস্তোরায়, কারন সেই একটাই, ভালো টমইয়াম সুপ খাওয়ানো। ইতোমধ্য আমার ছবি তোলায় চাচা প্রায় অস্থির হয়ে গেছেন, একবার তো মনে হল, আরেকবার শাটার টিপলেই থাবড়া দিবেন!

মেনুতে টমইয়াম সুপ দেখি না কেন?
মেনুতে টমইয়াম সুপ দেখি না কেন?


থামলে ভালো লাগে..
থামলে ভালো লাগে..


আরেকবার শাটার টিপ দিলে কিন্তু মাইর খাবেন!
আরেকবার শাটার টিপ দিলে কিন্তু মাইর খাবেন!


সন্ধ্যায় পুত্রাজায়ায় গেলাম। পুত্রাজায়ার স্থাপত্য চমৎকার। মাগরিবের সময় আকাশ ফেটে রং ঝরে। দশবাইশ ব্যবহারের উত্তম জায়গা এটা। মুস্তাফিজ ভাই এর হাটা বদলে গেছে ব্যাগের কারনে, লোপ্রোর ব্যাগ কাঁধে থাকলে সবাই কেমন নিজেকে বীরপুরুষ ভাবা শুরু করে। বুঝলাম আমারও একটা কেনার সময় হয়ে গেছে!

পুত্রাজায়ায় মুস্তাফিজ ভাই বেশী সুবিধা করতে পারলেন না। তার একটা বড় কারন ট্রাইপড। লোকে কেন পনেরবিশ হাজার টাকা দিয়ে ট্রাইপড কেনে সেইটা আমাদের দশবাইশ দাদা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন! যারা ট্রাইপড কিনবেন, তারা অবশ্যই একটু খরচ করে হাতে ব্যবহার করে ভালো জিনিসটা কিনবেন। না হলে কঠিন পস্তাতে হবে।

পুত্রাজায়া অভিযান
পুত্রাজায়া অভিযান


ট্রাইপড ভ্যাজাল করলে চাচ্চুদেরও রাগ হয়
ট্রাইপড ভ্যাজাল করলে চাচ্চুদেরও রাগ হয়


আর তুলুম না, হালার ট্রাইপড!!
আর তুলুম না, হালার ট্রাইপড!!


নটার দিকে শুটিং শেষ করে আমরা আবার গেলাম লাওইয়াতে, মাতিসের জন্য Wii কিনতে। ক্লান্তির কারনে ছবি তোলা থেমে গেছে অনেক আগেই। দোকান থেকে খাবার কিনে আমরা বাড়ি গিয়ে গল্প করতে করতে ডিনার সারলাম। ভদ্রলোক চলে যাবেন ভোর ছটার ফ্লাইটে। ক'টা দিন ভালোই কাটলো। খানিকটা বিষন্ন হয়েই চিন্তা করতে থাকি, এই মাঝবয়েসী তরুনের সাথে আবার কবে বেড়ানো যাবে?

থ্যাংক ইউ মুস্তাফিজ ভাই... আস্তা লাভিস্তা!!